মানহানি মামলায় জিতেছেন ২০২২ সালের ভিক্টোরিয়ান নির্বাচনে লেবার পার্টির সমর্থন হারানো নুরুল খান

FIRST PEOPLES ASSEMBLY OF VICTORIA

Victorian Parliament House in Melbourne (File Image). Source: AAP / MORGAN HANCOCK/AAPIMAGE

২০২২ সালের ভিক্টোরিয়ান স্টেট নির্বাচনে আপার হাউজ বা লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ওয়েস্টার্ন মেট্রোপলিটান আসনে লেবার পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান নুরুল খান। কিন্তু, একটি বেনামি চিঠির কারণে লেবার পার্টি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়, বলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি সেই বেনামি ইমেইলের কথিত প্রেরকের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারাল কোর্টে মামলা করেন। গত ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ আদালত তার পক্ষে রায় দেয়।


২০২২ সালের ভিক্টোরিয়ান স্টেট নির্বাচনে আপার হাউজ বা লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ওয়েস্টার্ন মেট্রোপলিটান আসনে লেবার পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান নুরুল খান। কিন্তু, একটি বেনামি চিঠির কারণে লেবার পার্টি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়, বলেন তিনি।

“২০২২ সালে আমি অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি থেকে প্রি-সিলেকশন পেয়ে আপার হাউজ ক্যান্ডিডেট ছিলাম। এবং সেটা নমিনেশন ফাইনালাইজড হওয়ার পরে একটা Anonymous ইমেইলের ভিত্তিতে আমার পার্টি, অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি (ALP) ডিস-ইনডোর্সড করে, অর্থাৎ, পার্টির পক্ষ থেকে সমর্থনটা তুলে নেওয়া হয়।”

লেবার পার্টির সমর্থন না থাকলেও নুরুল খানের প্রার্থিতা বৈধ ছিল। তবে, সেই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হতে পারেন নি। কারণ, তার মতে, পার্টির সমর্থন ছাড়া সেখানে বিজয়ী হওয়া যায় না।
মেলবোর্ন-ভিত্তিক ব্যারিস্টার ও সলিসিটর নুরুল খান অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে বাংলাদেশে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন।

বেনামি চিঠির কারণে লেবার পার্টি তার সমর্থন প্রত্যাহার করার বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে তিনি সেই ইমেইলের প্রেরকের পরিচয় জানার চেষ্টা করেন এবং গুগলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এক পর্যায়ে তিনি গুগলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেন এবং এর পর তিনি সেই বেনামি ইমেইলের কথিত প্রেরকের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারাল কোর্টে মামলা করেন। গত ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ আদালত তার পক্ষে রায় দেয়।

ফেডারাল কোর্টের ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ এর রুলিং অনুসারে, রেসপন্ডেন্ট বা বিবাদীর নাম মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ঠিকানা, ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক।

এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কীভাবে মামলা করেন, সে সম্পর্কে মি. খান বলেন,

“সেই ডিটেইলসের ভিত্তিতে আমি পরবর্তীতে খুঁজে পাই যে, (মোহাম্মদ) সাইফ উদ্দিন, যিনি নিউ ইয়র্কে ব্রুকলিনে থাকেন, তার ডিটেইলস পাওয়ার পরেই আমি Initial যে Process, যেটাকে Concern notice বলেন, কনসার্ন নোটিসের মাধ্যমে তাকে নোটিস দেওয়া হয়।”

“সেখানে দুটো অপশন, একটা হচ্ছে একটা ক্ষতিপূরণ, প্লাস এপলোজি চাওয়ার জন্য নোটিস দেওয়া হয়। বাট সে কোনো রেসপন্স করে নি। এরপরে, যেহেতু এটা ২৮ দিন পরে, আমি মোর দেন 28 days পরে আমি মামলা রুজু করি ফেডারাল কোর্টে।”

এটি ছিল ডিফেমেশন বা মানহানি মোকদ্দমা। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারাল কোর্টে ১৯ এপ্রিল ২০২৪ এর রায় দেওয়া হয়।

বেনামী ইমেইলটির প্রেরকের পরিচয় বের করার জন্য মি. খান একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরও নিয়োগ করেছিলেন।
এই মামলার বিবাদী আদালতে আসেন নি। এ সম্পর্কে মি. খান বলেন,

“কোর্টেরও তো একটা অল্টারনেটিভ রুল থাকে; অ্যাভয়েড করলেই তো আর সেটা শেষ হয় না। তার অল্টারনেটিভ সাবস্টিটিউট সার্ভিসের মাধ্যমে আমরা সার্ভিস স্যাটিসফাই করি।”

এই মামলার রায় সম্পর্কে মি. খান আরও বলেন,

“অর্ডারটাতে বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, যেহেতু বিবাদী বা Respondent এপিয়ার করে নি, সে আমার যে ক্ষতি হয়েছে, আমার যে রিপুটেশনাল ড্যামেজ লিকুইডেটেড ড্যামেজ বলেন, সেটা পে করবে এবং আমার মামলার খরচ ঐদিন পর্যন্ত, যেদিন রায়টা হয়েছে ঐদিন পর্যন্ত রেসপন্ডেন্ট পে করবে।”
Nurul Khan_Labour candidate 2.png
Labor Party withdraws support from Bangladeshi-origin Nurul Khan's candidacy. Credit: Nurul Khan/ Facebook
“এখন এই অ্যামাউন্টটা অ্যাসেস করবে হচ্ছে রেজিস্টার অব দ্য কোর্ট। মানহানির ক্ষতিপূরণ এবং আমার লিটিগেশনের টোটাল কস্ট। ব্যারিস্টার প্লাস ল ফার্মের সব খরচ। এবং এটা অ্যাসেস করবে উইদিন শর্ট টাইমেই। এটা আমাদের একটি অ্যাফিডেভিট এর মাধ্যমে অন পেপার্স।”

বিবাদী তো অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন না। তাহলে এই রায়টি কীভাবে কার্যকর হবে? বিবাদীর ঠিকানা তো নিউ ইয়র্কের। এ সম্পর্কে মি. খান বলেন,

“আপনারা জানেন যে, এই মামলাটা করেছে সেটাও একটা আইনের ভিত্তিতে। এখানে বাই-ল্যাটারাল ট্রিটি আছে। সেই ট্রিটির ভিত্তিতে আমাদের জুরিসডিকশন আমাদের ফেডারাল কোর্টের জুরিসডিকশন আছে। সেই ভিত্তিতেই মামলার রায়টা হয়েছে।”

“এখন কোয়েশ্চেন হচ্ছে যে, এই রায়টা কীভাবে ইমপ্লিমেন্ট বলেন, আর একজিকিউটি করা বলেন, বা এনফোর্স করা বলেন, সেটার যে প্রসেসটা, প্রসেসটা হচ্ছে যে, এই রায়টা নিয়ে ঐখানকার লোকাল কোর্টে এটি ইমপ্লিমেন্টেশনের জন্য একটা মামলা ইনিশিয়েট করতে হবে। সেটা একটা সামারি একটা প্রসিডিউর একটা সংক্ষিপ্ত একটা প্রসিডিউর।”

আর, এই কাজটা তাকেই করতে হবে, বলেন মি. খান।

“রাইট, আমাকেই করতে হবে। আমি ইতিমধ্যে ঐখানকার লোকাল কিছু রিসার্চ করেছি। কিছু ফার্মের সাথে আমার কথা হয়েছে, এবং রেপুটেড ফার্ম। এবং They are very interested to take this matter.”
লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করার বিষয়ে তিনি বলেন,

“দেখেন, ঐ সময়ে যে কারণে আমি পদত্যাগটা করেছি, মানে I was so frustrated এই কারণে যে, আমি একটা পার্টির এতদিন সময় দিয়েছি, কাজ করেছি একটা পার্টির অ্যাক্টিভ একটা কর্মী, সদস্য, সবই বলেন। কিন্তু, without any evidence, without any basis, আমাকে যে, পার্টির পক্ষ থেকে যে ডিসিশনটা দিল, এটা খুবই ডিজহার্টেড এবং ডিসাপয়েন্টেড ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, পার্টি করে লাভ কী তাহলে? যেখানে পার্টি কর্মীদের বা লিডারদের কোনো প্রটেকশন নেই।”

“আর, তাছাড়া, এখানে মেইনলি যেটা আপনারা জানেন যে, আমাদের লোকাল কমিউনিটির কিছু লোক এদের সাথে ইনভলভ ছিল। তাদের এই সুযোগটাকে এখানকার কিছু অস্ট্রেলিয়ান পলিটিশিয়ান যারা আছে, যারা এটাকে কাজে লাগিয়ে আমাকে এখানে ডেস্ট্রয় করেছে, that was the main fact.”

কমিউনিটিতে এর প্রভাব সম্পর্কে মি. খান বলেন,

“তো, এই যে ক্ষতিটা করলো, যারা আমার ক্ষতিটা করলো, আমার কমিউনিটির তো এটাই ইনিশিয়েটেট করেছে কমিউনিটির কিছু লোক। এবং whole কমিউনিটি ডিসগাস্টেড। whole কমিউনিটি কিন্তু এটা সাপোর্ট করে না।”

“কিছু লোকের এই কারণে যে কাজটা হলো, এটা আমাকে না, আমাকে আর পার্সোনালি কতটুকু ক্ষতি করেছে, আমি মনে করি যে, আমার দেশকে এবং আমার টোটাল বাংলাদেশী কমিউনিটিকে তারা ছোট করেছে।

“Which is very bad যে, আমরা একটা ছোট একটা কমিউনিটি, সেখানে একজনের পিছনে, মানে একজন উপরে উঠলে, তাকে যে, আপনারা জানেন যে, পা ধরে নামাতে হবে, এই যে অভ্যাসটা, এই যে ক্যারেক্টার, এটা আমাদেরকে, আমরা বের হয়ে আসতে পারছি না। Which is আমাদের কমিউনিটির জন্য, আমার দেশের জন্য এটা খুব ক্ষতিকর।”

এই মামলার বিবাদী নিই ইয়র্কে থাকতেন এবং মিস্টার খান মেলবোর্নে। তো, আন্তঃসম্পর্কটা কী? নির্বাচন তো ছিল অস্ট্রেলিয়ায়, আর, কথিত বা অভিযুক্ত ব্যক্তি বেনামী ইমেইল পাঠিয়েছেন নিউ ইয়র্ক থেকে। কেন? এ সম্পর্কে মি. খান বলেন,

“ওকে, that’s a good question. কারণ, আপনি জানেন যে, আমি, কে ঐ ইমেইল ঔনার, সেটাই তো আমি প্রথমে ফাইন্ড আউট করেছি। হ্যাঁ, সে আমার ধারণা ছিল এখানকার কেউ হবে।”

“কিন্তু, ইমেইল জিমেইলে বা গুগলে যে তথ্য অনুসারে রেজিস্ট্রেশন ডিটেইলস, এভরিথিং, সেখানে একটা নাম্বার ছিল, যেটা টু-ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন নাম্বার। যেটাকে হাইড করার কোনো অপশন নেই যে, কে এই জিমেইলের ঔনার। যেহেতু, সে সেটআপ করেছে টু-ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন দিয়ে।”

“তো, সেই মাধ্যমে যেমন ঐ ব্যক্তিকে বের করেছি এবং ঐ ব্যক্তির সাথে আমাদের এখানকার লোকের একটা এই কমিউনিটির কিছু লোকের কানেকশন আছে। That’s the main object যে, আমি ঐটাই।”

“এখন আমার নেকস্ট স্টেপ হবে ঐটা ফাইন্ড আউট করা। কারণ, ও যদি, ঐ ব্যক্তি যদি তাদের নামগুলো ডিসক্লোজ না করে, তাহলে তো তাকে কোর্টের সমস্ত ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে।”

“তো, ডেফিনিটলি কেন, কীভাবে রিলেশনটা, রিলেশনটা হচ্ছে আসলে এখানকার কেউ তাকে দিয়ে এটা করিয়েছে। ঐ লোকের, আমি চিনিও না, আমার বিশ্বাস সে-ও আমাকে কখনও চিনতো না। কিন্তু, সামহাউ, তাকে ইউজড করেছে।”
মি. খান বলেন, এই ঘটনার পর, ভিক্টোরিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে মানহানি ও কুৎসামূলক পোস্ট করা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।

“আমি যেটা আরেকটা বলতে চাই যে, এই যে কাজটা করলো, যারা বা যে, যে-ই করুক আমাদের কমিউনিটির মধ্যেই, হ্যাঁ, আমি তাদের উদ্দেশেই বলতে চাই যে, আমি এই মামলাটা লড়েছি এই কারণে, যাতে আমার মতো আর কেউ, এই সাফারিংসটা না হোক। কারণ, আপনি জানেন যে, আমার এই মামলার কারণে আমাদের এই ভিক্টোরিয়াতে at least আগে ফেসবুকে অহরহ প্রচার হতো, মানে (মানহানি/কুৎসামূলক) পোস্ট দিত একে অপরের এগেইনস্ট-এ পোস্ট দিত। এখন কমপ্লিটলি স্টপ হয়েছে। এবং এটা একটা লেসন ফর আদার্স।”

“এখন আপনার একটা পোস্ট দিতে গেলে তারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করে। কারণ, আগে এই কনসিকোয়েন্সগুলো জানতো না। তো এটা একটা লেসন ফর আদার্স ‍এজ ওয়েল। যাতে আমার মতো আর কেউই এই ধরনের ভুক্তভোগী না হোক। কারও সম্মানের ক্ষতি না হোক।”

মিস্টার খান অবশ্য এখানেই থামছেন না। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এটার শেষ পর্যন্ত দেখা, বলেন তিনি।

“যে সিচুয়েশনটা এটাকে ফাইট করার মতো আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাকে হয়তো সামর্থ্য দিয়েছেন। এবং আমার প্রফেশনাল কারণেই হয়তো আমি এটা সাহস করতে পেরেছি। এবং আমার ওয়াইফ এখানে, যিনি আমার মতো একজন লিগাল প্র্যাকটিশনার। তার যে সহযোগিতা, কারণ, বেসিক্যালি সেই ছিল আমার আইনজীবি। সে যে টায়ার্ডলেসলি কাজ করেছে, এই কাজের কারণেই হয়তো আমি এত দূর যেতে পেরেছি। এবং আমি আরও যাব। আমার উদ্দেশ্যই হচ্ছে এটার লাস্ট এন্ড পর্যন্ত দেখা। অনেস্টলি। এখানে, It’s not about the money. It’s about my reputation. It’s about the lesson for others. যাতে এ ধরনের অন্যায়, এ ধরনের কুৎসা, এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার দ্বারা অন্যের ক্ষতি না হয়।”

পরিশেষে বাংলাদেশী কমিউনিটির উদ্দেশে তিনি বলেন,

“আমি আমার বাংলাদেশী কমিউনিটির ভাইদের বলবো, এটা আমরা এখানে দূর দেশে আছি, আমরা একটা সভ্য জাতি হিসেবে এখানে এই দেশের কাছে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করার মতো দায়িত্ব, আমাদের দেশের মান-মর্যাদা যাতে আরও বৃদ্ধি পাবে, Whereas কিছু লোকের কারণে, খুবই মুষ্ঠিমেয় কিছু লোক, এরা কিন্তু, এই ধরনের লোকের কারণে আমার টোটাল জাতিটাকে যেন অন্য জাতির কাছে এইভাবে ছোট করে না তোলা হয়, সেটাই আমার একটা রিকোয়েস্ট থাকবে।”

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Share