নির্বাচন ২০২২: দি লেবার পার্টি

Whitlam Sacked by Sir John Kerr

Prime Minister Gough Whitlam addresses reporters outside the Parliament building after his dismissal by Australia's Governor-General, 1975. Source: Keystone/Hulton Archive/Getty Images

নির্বাচন পূর্ববর্তী ইলেকশান এক্সপ্লেইনার সিরিজের অংশ হিসেবে এবারে রয়েছে: দি লেবার পার্টি।


বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গণতন্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্র। আর অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টি এই দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল।

পুরো বিশ্বের সব লেবার পার্টিগুলোর মধ্যেও এটি প্রথম দিককার একটি, ফেডারেশান গঠিত হবার আগে ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন থেকে এর সূত্রপাত হয়েছিল।

এই দলটি তারপর থেকে ক্রমশই বিকশিত হয়েছে। আর এবারে ভোটারদের কাছে শুধুই একটি বিরোধী দল নয় বরং সম্ভাব্য সরকার হিসাবে নিজেদের অবস্থান ঘোষণার চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ছে।
১৮৯০ এর দশকে অর্থনৈতিক মন্দার সামনে পড়ে কুইন্সল্যান্ডের কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে তাদের একটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজন।

১৮৯৯ সালের ভেতরেই লেবার পার্টি কুইন্সল্যান্ডে তাদের প্রথম সরকার গঠন করে, এবং ১৯০১ সালে ফেডারেশান গঠনের পরে প্রথম জাতীয় সংসদে তারা আসন লাভ করে।

১৯০৪ সালে ক্রিস ওয়াটসন লেবার পার্টির প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন, এবং একটি সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দেন।

১৯১০ এর সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মত কোনও দল হিসেবে সংসদের দু’টি ফেডারেল হাউজেই লেবার পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

কিন্তু আর সবার চেয়ে গফ হুইটল্যামই সম্ভবত লেবার পার্টির সবচেয়ে আইকনিক প্রধানমন্ত্রী, যিনি তাঁর সংস্কারমূলক কার্যক্রমের জন্যে সমর্থকদের কাছে সম্মানিত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল স্যার জন কার-এর মাধ্যমে বরখাস্ত হন।

লিবারাল পার্টির নেতা ম্যালকম ফ্রেজার সিনেটে বাজেট বিল আটকে দিলে ১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর গফ হুইটল্যাম প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদচ্যুত হন।
স্যার জন কার তারপরে ম্যালকম ফ্রেজারকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। পরের ফেডারাল নির্বাচনেই গফ হুইটল্যামের লেবার পার্টি বিশাল পরাজয় বরণ করে।

অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল অব ট্রেড ইউনিয়নের সাবেক নেতা বব হক ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত লেবার পার্টির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

বব হকের পরিচিতি ছিল বিয়ার-প্রেমী যুবক হিসেবে, যার সাথে প্রায় প্রতিটি সাধারণ অস্ট্রেলীয়ই নিজের মিল খুঁজে পেত।

বব হকের নেতৃত্বাধীন সরকার অস্ট্রেলীয় অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার জন্যে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলীয় ডলারের বিনিময় হারের ওপরে রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নেয়া, আবার একই সাথে মন্দাকালীন সময়ের সঠিক তত্ত্বাবধান করা, গ্রেট ডিপ্রেশানের পর থেকে যে সময়টায় বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু বব হক সম্ভবত সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর আমেরিকা’স কাপ ইয়ট রেসে অস্ট্রেলিয়ার যুগান্তকারী জয়ের প্রতিক্রিয়াটির জন্যে।

ট্রেজারার পল কীটিং এর ছুঁড়ে দেয়া এক তিক্ত চ্যালেঞ্জের ফলে বব হক দলের নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীত্ব দুটিই হারান। কীটিং দাবি করেন সর্বোচ্চ পদ তিনি পাবেন বলে বহু বছর আগেই একটি চুক্তি নাকি এই দুজনের মধ্যে হয়ে ছিল।

নেতৃত্ব নিয়ে এই প্রতদ্বন্দ্বিতা আবার ফিরে আসে যখন ২০০৭ এ কেভিন রাড সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন।

কেভিন রাডের এই বিজয় তাঁর পূর্বসূরী অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী লিবারাল পার্টির জন হাওয়ার্ডকে একইসাথে ক্ষমতাচ্যুত এবং তাঁর নিজের নির্বাচনী আসনে পরাজিত করেছিল।

কেভিন রাড খুব দ্রুতই সেই সব ইন্ডিজেনাস মানুষদের কাছে জাতীয় ক্ষমা প্রার্থণার জন্যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, শিশু অবস্থায় যাদেরকে জোর করে সরকারী ব্যবস্থাপনায় তাদের পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু কেভিন রাডের ক্ষমতাকালীন বছরগুলোও দলের নেতৃত্বে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে সুবিদিত।

২০১০ সালের জুন মাসে যখন কেভিন রাডের ডেপুটি জুলিয়া গিলার্ড তাঁকে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেন, তখন রাড প্রধানমন্ত্রীত্ব এবং লেবার পার্টির নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

স্বভাবতই কেভিন রাডের পদত্যাগের পরে জুলিয়া গিলার্ড এই পদটি গ্রহণ করেন। এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি  অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। প্রধানমন্ত্রী হবার আগে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারও ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পুরো সময়টাতেই জুলিয়া গিলার্ড তাঁর নিজের দলের ভেতরে, বিশেষ করে কেভিন রাড ও তাঁর সমর্থকদের কাছ থেকে ক্রমাগত বিরোধীতার মুখে পড়েছিলেন। একই সাথে তাঁকে লিবারাল পার্টির নেতা টনি এবটেরও মুখোমুখি হতে হচ্ছিল।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেভিন রাড আবারও জুলিয়া গিলার্ডকে নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। তবে নেতৃত্ব নিয়ে এই উত্তেজনা আর দীর্ঘায়িত হয়নি কারণ ২০১৩ সালের মার্চ মাসে জুলিয়া গিলার্ড আরেকটি ভোটের ডাক দেন।

এবারে কেভিন রাড আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং দলের নেতা হিসেবে জিতে যান। জুন মাসে লেবারের দলনেতার পদ এবং প্রধানমন্ত্রীত্ব ফিরে পান, কিন্তু সেপ্টেম্বরের নির্বাচনেই তাঁর দল লেবার পার্টি হেরে যায়।

নেতৃত্ব নিয়ে দলের অভ্যন্তরের এই লড়াইয়ে একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি হচ্ছেন ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সাবেক ইউনিয়ন নেতা বিল শর্টেন।

তিনি কেভিন রাডের ওপর থেকে সরিয়ে জুলিয়া গিলার্ডের প্রতি তাঁর সমর্থন ঘোষণা করেন, যা গিলার্ডকে তাঁর নেতৃত্ব পেতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আবার ২০১৩ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের সময় তিনি আবারও কেভিন রাডের প্রতি তাঁর সমর্থন ফিরিয়ে আনেন।

সেই ফেডারাল নির্বাচনে লেবার পার্টি হেরে গেলে বিল শর্টেন দলটির নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।

কিন্তু লেবার পার্টির দলনেতা হিসেবে বিল শর্টেনের সময় হঠাৎ করেই শেষ হয়ে আসে। ২০১৯ এর নির্বাচনে যখন স্কট মরিসনের নেতৃত্বে লিবারাল পার্টি বিজয়ী হয় তখন লেবার পার্টির দলনেতা-র পদ থেকে বিল শর্টেন সরে দাঁড়ান।

স্কট মরিসনের এই জয়কে আধুনিক অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ও অসম্ভব নির্বাচনী বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নির্বাচনের আগে প্রায় দুই বছর ধরে সব জরিপ ও পরিসংখ্যানের ফলাফল ইঙ্গিত করছিল যে কোয়ালিশন বা দলীয় জোট লেবার পার্টির কাছে হারতে চলেছে।

ডক্টর পিটার চেন সিডনি ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এন্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশানস এর একজন সিনিয়র লেকচারার।

তিনি বলেন, জরিপের ফলাফল অবলোকন করে সেগুলো পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপ পদ্ধতি পুনরায় পর্যালোচনা করতে বাধ্য হয়েছিল।

নির্বাচনের পরের দিনই এনথনি এলবানিজি লেবার পার্টির নেতা পদে তাঁর প্রার্থীতা ঘোষণা করেন এবং ২০১৯ সালের ৩০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের নেতা হিসেবে ঘোষিত হন।

ডক্টর চেন আরও বলেন, পরবর্তী নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার আগে এনথনি এলাবানিজি এবং তাঁর লেবার পার্টি চাইবে কেবল সাধারণ কোনও বিরোধী দলই নয় বরং সম্ভাব্য সরকার হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করতে।

ডক্টর চেন বলেন, লেবার পার্টির জন্যে আরও বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশের ভেতরে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি ও বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে ইউরোপে যুদ্ধের এই অস্থির সময়ে মানুষের ভোট জিতে নেয়া।


এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।
রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:  

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share