অস্ট্রেলিয়ায় পিতামাতাদের স্থায়ী অভিবাসন ভিসার আবেদন নিস্পত্তি হতে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়

Parent visas are being lodged faster than they are processed

Parent visas are being lodged faster than they are processed Source: SBS

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্সের তথ্য থেকে দেখা যায় যে গত নয় বছরে, প্রতি বছর যত ভিসা প্রসেস হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক অভিভাবক ভিসার আবেদন জমা পড়ছে। অনেক আবেদনকারী বলেছেন যে ভিসা নিস্পত্তির দীর্ঘ অপেক্ষার সময় বাবা-মা মারা যাচ্ছেন বা ভ্রমণের জন্য শারীরিক সামর্থ্য হারাচ্ছেন।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো

  • মেলবোর্ন-ভিত্তিক মারিয়ানা জিওর্দানা সম্প্রতি 'ক্লিয়ার প্যারেন্ট ভিসা ব্যাকলগ ক্যাম্পেইন' চালু করেছেন
  • ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১২৩,০০০-এরও বেশি প্যারেন্ট ভিসার আবেদন হোম এফেয়ার্সে জমা আছে
  • একটি বিবৃতিতে ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্স কোভিড-১৯ মহামারীকে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে

প্রেমদীপ সিং ডান্ডিওয়াল এবং তার ভাইয়ের পরিকল্পনা ছিল ভারতে থাকা তাদের বাবা-মা যেন তাদের সাথে অ্যাডিলেডে একসাথে থাকতে পারেন।

এজন্য অক্টোবর ২০১৬-তে প্রেমদীপ আবেদন করেন কন্ট্রিবিউটরি প্যারেন্ট ভিসার জন্য, সেসময় তার বাবা-মায়ের বয়স ছিল ৬০-এর কোঠায়।

কিন্তু তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা যখন কন্ট্রিবিউটরি প্যারেন্ট ভিসার জন্য ২০১৬ সালের অক্টোবরে আবেদন করি, সেই সময়ে আশা করছিলাম এজন্য হয়তো দুবছরের মত লাগবে। এমনকি হোম অ্যাফেয়ার্স ওয়েবসাইটেও এ কথাই বলা হয়েছে যে এজন্য ১২ থেকে ২৪ মাস লাগবে।

কিন্তু তারপর থেকে সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, এবং এই দুভাই এখনও তাদের পিতামাতার ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া নিস্পত্তির জন্য অপেক্ষা করছেন।

মেলবোর্নে, ইরানি অভিবাসী রোয়া সালামতির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।

২০১৭ সালে, তিনি এবং তার ভাই তেহরানে বসবাসকারী তার বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য কন্ট্রিবিউটরি প্যারেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন।

সেই ভিসার আবেদনগুলোর প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।

এর মধ্যে তাদের একজনের নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে কারণ মিজ সালামতির বাবা কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
মিঃ ডান্ডিওয়াল এবং মিসেস সালামতি একা নন।

৩০ এপ্রিল পর্যন্ত, ১২৩,০০০-এরও বেশি প্যারেন্ট ভিসার আবেদন হোম এফেয়ার্সে জমা আছে।

মেলবোর্ন-ভিত্তিক মারিয়ানা জিওর্দানা সম্প্রতি 'ক্লিয়ার প্যারেন্ট ভিসা ব্যাকলগ ক্যাম্পেইন' চালু করেছেন।

তার অনুমান বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন ভিসার আবেদন মঞ্জুর হতে প্রায় ১৯ বছর সময় লাগবে।

তিনি বলেন,“আবেদনের সময়ে আমাদের বেশিরভাগকে বলা হয়েছিল, দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে, এরকম কিছু। কিন্তু এটা সঠিক না।"

ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্সের মতে নতুন কন্ট্রিবিউটরি প্যারেন্ট ভিসার আবেদন চূড়ান্ত নিস্পত্তির জন্য কমপক্ষে ৬৫ মাস সময় লাগতে পারে- যার ফী ৩৩,০০০ ডলার থেকে ৪৮,০০০ ডলার।

মারিয়ানা জিওর্দানা বলেন, আসলে এই ভিসাগুলো প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ১৬ বছর সময় লাগছে।

তিনি বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ বাবা-মায়েরা ৬০-৬৫ বছর বয়সে আবেদন করেন। যখন তারা ভিসা পাবেন তখন তাদের বয়স ৭৫ থেকে ৮০ হয়ে যাবে।

আমরা জানি না তাদের মধ্যে তখনও কতজন জীবিত থাকবে।"

মিজ জিওর্দানা বলছেন যে প্রক্রিয়াকরণের এই দীর্ঘ সময় অভিবাসীদের পিতামাতাদের জন্য হৃদয়বিদারক, বিশেষ করে যারা বিদেশে থাকেন। কারণ এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের সন্তানদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।

একটি বিবৃতিতে ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্স কোভিড-১৯ মহামারীকে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ডিপার্টমেন্ট বলছে যে বায়োমেট্রিক সংগ্রহ, ইংরেজি-ভাষা পরীক্ষা কেন্দ্র এবং পেপার অ্যাপ্লিকেশন লজমেন্ট কেন্দ্র স্থাপন এবং প্যানেল ডাক্তার সুবিধার অপর্যাপ্ততা এই প্রক্রিয়ায় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তবে মিঃ ডান্ডিওয়াল এবং মিজ সালামতি উভয়ের ক্ষেত্রেই সমস্যাটি মহামারীর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলছেন, কোন কিছুই পরিকল্পনা মাফিক আগাচ্ছে না, এটি কোথায় যাচ্ছে, আপনি যখন এর ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন না তখন বিষয়টি বেশ কঠিন হয়ে যায়।
হ্যাশট্যাগ ক্লিয়ার প্যারেন্ট ভিসা ব্যাকলগ (#ClearParentVisaBacklog) থেকে পাওয়া তথ্য এবং ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্স (D-H-A) থেকে যাচাইকৃত ডেটা থেকে দেখা যায় যে গত নয় বছরে প্রতি বছর যত ভিসা প্রক্রিয়াধীন ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক প্যারেন্ট ভিসা আবেদন জমা পড়েছে।

যেমন, ২০১৩-১৪ সালে, ডিপার্টমেন্ট ২৬,০০০-এরও বেশি প্যারেন্ট ভিসার আবেদন পেয়েছিল, কিন্তু মাত্র ৯,০০০টি মঞ্জুর করা হয়েছিল।

২০২০-২১ সালে, ১৪,০০০-এরও বেশি প্যারেন্ট ভিসার আবেদন গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু মাত্র ৫,০০০ ভিসা মঞ্জুর করা হয়েছিল।

তাহলে ভিসা দীর্ঘদিন প্রক্রিয়াধীন থাকার কারণ কী?

ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্সের প্রাক্তন ডেপুটি সেক্রেটারি আবুল রিজভীর মতে বয়স্ক জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ একটি বড় কারণ।

তিনি বলেছেন যে জন হাওয়ার্ডের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে ১৯৯৬ সালে প্যারেন্ট ভিসার ক্যাপিং বা সংখ্যা সীমিতকরণ শুরু হয়েছিল - এটি করা হয়েছিল বয়স্ক জনসংখ্যার হার কমানোর জন্য - এবং আজও তা অব্যাহত রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলির চেয়ে বেশ কঠোর প্যারেন্ট মাইগ্রেশন নীতি বজায় রেখেছে।

তবে তিনি বলছেন, এটি একটি জটিল সমস্যা। আমার দৃষ্টিতে, কোন দেশ বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের বিষয়ে কোন ভালো উপায় খুঁজে পায়নি। অস্ট্রেলিয়ায় আমরা এ নিয়ে একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি।


পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।


Follow SBS Bangla on .

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:  

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

আরও দেখুন:

Share