প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ায় ঈদ: বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসা চার জন শিক্ষার্থীর যেমন কাটল এই দিন

করোনাকালীন বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যাওয়ায় এ বছর ঈদ আয়োজন আগের বছরের তুলনায় অনেক উন্মুক্ত ছিল। মানুষের অংশগ্রহণও ছিল আগের দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রবাসে কাটানো প্রথম ঈদ নিয়ে, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে পড়তে আসা চার জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী কথা বলেছেন এসবিএস বাংলার সঙ্গে।

Bangladeshi International Students In Australia

ঈদের দিন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে কয়েকজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। Source: Nahidur Rahman Aurnab

এক মাস সিয়াম সাধনার পরে বিশ্ব জুড়ে উদযাপিত হয়ে গেল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর।

চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা গত সোমবার অথবা মঙ্গলবারে ঈদ উদযাপন করেছেন।

তবে যে দিনই পালন করা হোক, ঈদ মানেই সকল মুসলিমদের কাছে অনাবিল আনন্দ ও উৎসবের একটি দিন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে এক বাণীতে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “২০২০ ও ২০২১ সালে অনেকবারই বিভিন্ন উৎসবের উদযাপন বাতিল করতে হওয়ায়, এ বছর ঈদের আনন্দ অনেক অনেক বেশি।“

“গত বছর ঈদে আমি বলেছিলাম, সামনে হয়ত আনন্দের দিন আসছে, আমরা খানিকটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।

“এই বছর, আমরা সেই আনন্দকে স্বাগত জানাচ্ছি।"
কেমন কেটেছে এ বারের ঈদ– এ নিয়ে আমরা কথা বলেছি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে পড়তে আসা চারজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

তাঁদের সবারই এবার প্রথমবারের মত দেশের বাইরে, পরিবারের কাছ থেকে দূরে কাটাতে হল ঈদের দিন। প্রত্যেকেই পরিবারের সাহচর্যের অভাব বোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

ইশরাক জুহায়ের অর্ক জানিয়েছেন, দেশে থাকা বাবা-মা, দাদী এবং ছোট বোনকে ছেড়ে এই প্রথম ঈদ করা হল তাঁর, সবার কথা অনেক মনে হয়েছে।

একই কথা বলেছেন তোয়া সাইয়ারা ইসলাম, তিনমাস হয়েছে মেলবোর্নে এসেছেন তিনি।

তোয়া বলেছেন,“এই প্রথম ঈদের সকালে উঠে মা-কে না দেখা…।“

নাহিদুর রহমান অর্ণব ঈদের নামাজ পড়ে ছোট ভাইকে পাশে না পেয়ে এবং বাবার সাথে কোলাকুলি করতে না পারায় শূন্যতা অনুভব করেছেন।

তিনি কম্পিউটার সায়েন্স ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিষয় নিয়ে মেলবোর্নের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।  

তবে আধুনিক প্রযুক্তির পূর্ণ সুবিধা নিয়েছেন প্রত্যেকেই। ঈদের সময়টায় নিয়মিত ফোনে কথা বা ভিডিও চ্যাটে আলাপ করেছেন তাঁরা দেশে থাকা পরিবারের সঙ্গে।
দেশের ঈদের সঙ্গে প্রবাসের ঈদের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো ঈদের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি না থাকা। সবার জন্যেই এটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতা।

সারতাজ খাঁনও পড়ছেন কম্পিউটার সায়েন্স ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। তিনি জানিয়েছেন, ঈদের দিন ক্লাস, ল্যাব, প্রোজেক্ট, কিছুই বাদ যায়নি তাঁর, করতে হয়েছে সব কিছুই।

ঈদের দিন ক্লাস ছিল ইশরাকেরও। দেশে থাকাকালীন ঈদে ছুটি নেই, এ ব্যাপারটি ভাবনায় আসাও অসম্ভব ছিল তাঁর পক্ষে।

দেশ থেকে অনেক দূরে, তাই দেশের মত করে ঈদের আমেজ নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন শিক্ষার্থীদের অনেকেই।

ইশরাক যেমন দেশের মত করেই আত্মীয়দের বাড়ি বেড়াতে গেছেন ঈদের দিন।

তিনি বলেন,“সবার সঙ্গে দেখা না হলে একা একা তো আসলে ঈদ হয় না!”
Ishraq Zuhaer Orko
ইশরাক জুহায়ের অর্ক Source: Ishraq Zuhaer Orko
আর তোয়া দেশে থাকাকালীন যেমনটা করতেন, সেভাবেই ঈদের দিন একটি ডেজার্ট আইটেম রান্না করেন।

তিনি বলেন,“আমার ছোটভাই এই আইটেমটা খুবই পছন্দ করে। তাই এ বছর এটি রান্না করে আমি আমার ভাইকে খুবই মিস করেছি।“

দেশে সব বন্ধু-পরিজনদের ছেড়ে আসলেও এখানে এসে অনেকেই নতুন বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছেন এর মধ্যে।

সারতাজ জানালেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সোসাইটির অনেকে মিলে একসাথে ঈদ পালন করেছেন তাঁরা। ঈদের নামাজের পরে সবাই মিলে বার-বি-কিউ এর আয়োজন ও খাওয়া দাওয়া হয়েছে অনেক।

সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তিনিও অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছেন।

সৌভাগ্যবান কেউ কেউ অবশ্য এখানে এসে পেয়ে গেছেন অনেক পুরনো বন্ধুদের।

নাহিদ বলেন, “আমি কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে পড়েছি। আর ভাগ্যক্রমে এখানে এসে দেখি বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজের প্রায় দশজন আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি।“

“আমাদের বন্ধুত্ব প্রায় ছয়-সাত বছরের পুরনো। আমরা বলা যায় একই সাথে বড় হয়েছি। তাই এখানে ওদের পেয়ে খুবই ভাল হল।"
Nahidur Rahman Aurnab
বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের দিন নাহিদুর রহমান অর্ণব। Source: Nahidur Rahman Aurnab
করোনার কারণে বাংলাদেশেও গত দুই বছরে ঈদের আয়োজনে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। এ বছরে বাংলাদেশের মতন অস্ট্রেলিয়ায়ও মহামারীর  বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল হয়েছে।

তোয়া বলেন, “এই ঈদে আমি আমাদের ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটিয়েছি।"

“বড় একটা গ্যাদারিং এর আয়োজন করা হয়েছে এখানে। দেখে ভাল লাগছে যে ধীরে ধীরে সবার ভেতর প্যানডেমিকের আগের সময়ের স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে।"
Toa Saiara Islam
মেলবোর্নে ঈদের দিনে তোয়া সাইয়ারা ইসলাম(ছবিতে বামে)। Source: Toa Saiara Islam
অস্ট্রেলিয়ায় এসে বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন করে  পরিচিত হতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।  

নাহিদ বলেন, “দেশে যেমন শুধু বাংলাদেশী মুসলিমদের কালচার দেখেছি, এখানে এসে দেখছি অস্ট্রেলিয়ায় কী করে ঈদ হয়।“

“আবার আমার আলজেরিয়া ও ইথিওপিয়ার কিছু বন্ধু হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে সে দেশগুলোর ঈদ এবং অন্যান্য কালচার সম্পর্কে জানতে পারছি।

“এ ব্যাপারগুলো আমাকে খুবই আনন্দ দেয়।“

সব মিলিয়ে অবশ্য এবারের ঈদ বেশ ভাল গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সবাই।   

পরিবার থেকে দূরে থাকার বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে, নতুন দেশে নতুন পরিবেশে, নতুন মানুষদের সাথে তাঁরা ছেড়ে আসা দেশের বহু চেনা ঈদের আনন্দকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন।

ঈদের আনন্দ উদযাপনের সেই চেষ্টা সফল হয়েছে বলা চলে। 


Follow SBS Bangla on .

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:  

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share
Published 4 May 2022 2:27am
Updated 4 May 2022 10:25am
By Tareq Nurul Hasan

Share this with family and friends