বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কৃষি উন্নয়নে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েষ্টার্ন অস্ট্রেলিয়া

Australian team with relay farm households.jpg

Australian team with relay farm households. Credit: Dr. M G Neogi

শুস্ক মৌসুমে উপকূলের অনাবাদী জমিকে আবাদের আওতায় আনতে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের যৌথ প্রকল্পের আওতায় (CIM-ACIAR-2014-076) অস্ট্রেলিয়ার এসিআইএআর (ACIAR) এবং বাংলাদেশের কেজিএফ (KGF) এর অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্স্টান অস্ট্রেলিয়া, সিএসআইআরও (CSIRO), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গত ২০১৭ সন থেকে গবেষণা করে আসছে। এসব বিষয় নিয়ে এসবিএস বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন স্বাধীনতা পুরষ্কার-২০২১ পদক প্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েষ্টার্ণ অস্ট্রেলিয়া, ড. এম. জি. নিয়োগী।


জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিজমিতে লবনাক্ততার মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। বাড়ছে তাপমাত্রা, খরা এবং অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিপাত।

এই সমস্ত কারণে উপকূলের কৃষকরা শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ করে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। ফলে উপকূলের বেশীরভাগ কৃষক শুকনো মৌসুমে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

সারা বছর শুধুমাত্র বৃষ্টির মৌসুমে একটি ফসল আমন ধান করেই কৃষকদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। বাকী সময় অর্থাৎ পুরো শুকনো মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকছে।

শুষ্ক মৌসুমে এই সমস্ত পতিত জমিতে লাভজনক ফসল ফলানোর লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে গবেষণা করে লবনাক্ততা ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু ডাল ও গম ফসলের জাত উদ্ভাবন করছেন, যা উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষক পরিবারে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় অবদান রাখছে।

প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান CSIRO সরাসরি সম্পৃক্ত।
Photo Neogi Passport 2023.jpg
Dr M.G. Neogi is the Deputy Project Leader at the University of Western Australia. Credit: Dr M.G. Neogi
অস্ট্রেলিয়ার ACIAR ( Australian Centre for International Agricultural Research ) এবং বাংলাদেশের KGF (Krishi Gobeshona Foundation ) এই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা করছে।

এই কৃষিপণ্যের একটি হচ্ছে মুগডাল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মুগডালের তিন ভাগের দুই ভাগই বৃহত্তর বরিশাল বিভাগ থেকে আসে।

শুধু পটুয়াখালী, ভোলা এবং বরগুনা জেলাতেই লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে মুগডালের চাষ হয়। মুগডাল অত্যন্ত কম সময়ের ফসল। মাত্র ৬০-৭০ দিনে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। এরচেয়ে কম সময়ে আর কোন ফসল ঘরে তোলা যায় না।

সেইজন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে ধান কাঁটার অব্যবহিত পরেই পতিত জমিতে চাষ দিয়ে জানুয়ারী মাসে যদি মুগডালের বীজ বোনা যায় তাহলে বীজ বোনার ৬০-৭০ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিল মাসের প্রথমেই অর্থাৎ জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার আগেই প্রথম বারের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে এখন আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে লবণাক্ততার তীব্রতা হ্রাস পায়। তখন দ্বিতীয়বার ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। তবে বেশি বৃষ্টি হলে অথবা বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে মুগডালের জমি নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।
Mannan Badghat.jpg
Farmers in Bangladesh rely on growing rice in the wet season. But in the dry season, some fields lay fallow and unproductive because of the risk of growing crops in saline conditions. Credit: Dr M.G. Neogi
অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় গ্রামে গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে মুগ কালাই ভাঙ্গানোর জন্য মিনি-মিল বসানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় মুগডাল মিনি-মিল বসানো হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প গত কয়েক বছর ধরে মুগ কালাই ভাঙ্গানোর জন্য মিনি-মিল নিয়ে গবেষণা করে আসছে। মিনি-মিল একটি ছোট আকারের ডাল ভাঙানোর মেশিন, যা স্থানীয় কারিগর দ্বারা তৈরি। এর খুচরা যন্ত্রাংশ স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্পের গবেষণায় পরিশীলিত এই মিনি-মিল দিয়ে এখন অনায়াসে মুগ কালাই ভাঙানো যাচ্ছে। বিশেষ ধরণের রোলার এই মিনি-মিলে বসানো হয়েছে। এতে মুগডালের খোসা ছাড়ানো ত্বরান্বিত হয়।

এ ধরণের মিনি-মিল প্রতিদিন এক হাজার কেজি পর্যন্ত ডাল ভাঙ্গাতে পারে। ডাল ভাঙ্গানোর পাশাপাশি গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য কৃষক ভূষি পাচ্ছে।

এসব এলাকায় আরেকটি ফসল হচ্ছে মটরশুটি। বাংলাদেশে মটরশুটি অত্যন্ত পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি সবজি, যা অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ।

এই সবুজ মটরশুটিই পরিপক্ক হলে এটি মটর ডালে পরিণত হয়। তখন এটিকে মটর ডাল হিসাবে খাওয়া হয়। দুভাবেই বাংলাদেশের মানুষ এটি খেয়ে থাকে। এছাড়া শাক হিসাবেও বাংলাদেশের মানুষ এটিকে পছন্দ করে।
Women farm households are directly involved with mungbean production at Kolapara saline fallow land.jpg
Women farm households are directly involved with mungbean production at Kolapara saline fallow land. Credit: Dr M.G. Neogi
মটরসুটি বা মটর ডালের বহুবিধ খাদ্য ও অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধতা এবং জনপ্রিয়তার কারনে নিরামিষভোজী মানুষের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অর্ধেক কাপ মটরশুটিতে ৪ গ্রাম প্রোটিন এবং ৪ গ্রাম আঁশ আছে। সেখানে একই পরিমান গাজরে মাত্র এক গ্রাম প্রোটিন আছে।

মটরশুটিতে প্রচুর ফলিক এসিড আছে। এটি ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিডের অন্যতম উৎস, যেটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মটরশুটিতে যথেষ্ট পরিমান ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ম্যাঙ্গানিজ, থায়ামিন, আয়রন এবং ফসফরাস আছে।

হাড় এবং মাংসপেশীর দৃঢ়তার জন্য মটরশুটি অত্যন্ত উপযোগী - বিশেষ করে আর্থাইটিস ও অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মটরশুটি বার্ধক্যের লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। মটরশুটি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।

আলঝেইমার ও ব্রংকাইটিস রোগ প্রতিরোধে মটরশুটি কার্যকর। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনেও মটরশুটি ভাল ভূমিকা রাখে। পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে মটরশুটি অত্যন্ত কার্যকর। হৃদযন্ত্রের জন্য মটরশুটি ভাল। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে মটরশুটি ইতিবাচক।

শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে মটরশুটি কার্যকর। মটরশুটি বা মটর ডালের বহুবিধ খাদ্য ও পুষ্টিমানের কারণে এবং মটরসুটি বা মটর ডাল উভয়েরই ভোক্তার কাছে যথেষ্ট চাহিদা এবং ভাল বাজার থাকার জন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প মটরশুটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে এর উন্নয়নে গবেষণা করছে।

ড. এম. জি. নিয়োগীর সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 





Share