শরণার্থী সপ্তাহ বা রেফিউজি উইক: শরণার্থী মানুষের বৈচিত্রের অভিজ্ঞতা অর্জন ও উদযাপনের প্রয়াস

Refugee Week 2022

Refugee Week 2022 Source: RCOA

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরাপত্তার সন্ধানে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। রেফিউজি উইক হল শরণার্থীদের সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য এবং অস্ট্রেলিয়ার সমাজে তাদের করা ইতিবাচক অবদান উদযাপনের জন্যে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক কর্মসূচী। রেফিউজি উইক ২০২২ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে হিলিং বা নিরাময়।


মূল বিষয়গুলো:

  • রেফিউজি উইক হল শরণার্থীদের সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক কর্মসূচী
  • প্রতি বছর রেফিউজি উইকের একটি নতুন প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে
  • অস্ট্রেলিয়ার রেফিউজি কাউন্সিল শরণার্থীদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সারা বছর ধরে অনেক কার্যক্রম পরিচালনা করে
  • গত এক দশকে শরণার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে

অস্ট্রেলিয়ায় রেফিউজি উইক প্রতি বছর জুন মাসের কোনও এক রবিবার থেকে পরবর্তী শনিবার পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়, যেন এর মধ্যে ২০ জুন বা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই নিয়মে ২০২২ সালে এটি ১৯ জুন রবিবার থেকে ২৫ জুন শনিবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৮৬ সালে সিডনিতে প্রথম রেফিউজি উইক কার্যক্রমের আয়োজন করে অস্টকেয়ার। ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার শরণার্থী কাউন্সিল বা RCOA এই আয়োজনের সহ-সংগঠক হিসেবে আবির্ভুত হয় এবং পরের বছর এই অনুষ্ঠানটি একটি জাতীয় কর্মসূচীতে পরিণত হয়। RCOA ২০০৪ সাল থেকে রেফিউজি উইকের জাতীয় সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
Adama Kamara, Deputy CEO of RCOA
Adama Kamara, Deputy CEO of RCOA Source: Supplied by RCOA
RCOA-র ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যাডামা কামারা বলেন, রেফিউজি উইকের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান সমাজে শরণার্থীদের ইতিবাচক অবদানগুলো উদযাপন করা।

প্রতি বছরই রেফিউজি উইকের একটি থিম বা মূল প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে।

মিজ কামারা ২০২২ সালে রেফিউজি উইকের থিমটি ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি করা হয় মূলত অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলি সম্পর্কে সকলের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এবং শরণার্থী জীবনের অভিজ্ঞতা জনসাধারণকে বুঝতে সহায়তা করার জন্য।
RCOA ambassador, Oliver Slewa
RCOA ambassador, Oliver Slewa Source: Supplied by RCOA
অলিভার স্লেবা সিডনি-ভিত্তিক একজন আইনজীবী এবং রেফিউজি উইকের প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন। তিনি ইরাকের একটি আসিরীয় পরিবারে বেড়ে ওঠেন এবং ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার আগে শরণার্থী হিসেবে জর্ডান, তুরস্ক এবং গ্রীসের ভেতর দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন।    

তিনি বলেছেন যে প্রজন্মান্তরের ক্ষতিকর অভিজ্ঞতা মুছে যেতে অনেক বছর সময় নিতে পারে, তবে শরণার্থীরা তাদের "পুনর্বাসনের যাত্রা" শুরু করার পরে ধীরে ধীরে সে-সবের নিরাময় সম্ভব। 

তিনি বিশ্বাস করেন যে শরণার্থীদের জন্য নিরাময়ের মূল উপাদান হল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অদম্য ইচ্ছা।  

এই হিলিং বা নিরাময় থিমটি মূলধারার জনগণ এবং শরণার্থী সম্প্রদায়গুলিকে একে অপরের কাছ থেকে শিখতে এবং নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার জন্যে কষ্ট ভাগ করে নিতে উৎসাহিত করে।  

আর অন্যদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা খুলে বলতে শুরু করা নিরাময়ের দিকে প্রথম পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন মি: স্লেবা।

রেফিউজি উইক এবং তার পরেও RCOA দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসুচী থাকে।
Face-to-Face program by RCOA
Face-to-Face program by RCOA Source: RCOA
এই অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি হলো , যা পুরো রেফিউজি উইক জুড়ে চলে। এটি RCOA প্রতিনিধিদের দ্বারা উপস্থাপিত ও পরিচালিত একটি কর্মশালা।

এখানে শরণার্থী বক্তারা নিরাপত্তার খোঁজে পাড়ি দেয়া ভ্রমণের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সবাইকে বলেন এবং শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দেন শরণার্থীদের অভিজ্ঞতা এবং অস্ট্রেলিয়ায় তাদের অবদান সম্পর্কে জানার।

এই পরিবেশনাগুলি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী মানুষদের জন্য উপযুক্ত করে তৈরি করা।

RCOA -র ডেপুটি সিইও অ্যাডামা কামারা বলেন, এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে শরণার্থীদের সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলি খণ্ডন করা।

গত এক দশকে বিশ্ব জুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এই সংখ্যা এখন ৪১ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৮২.৪ মিলিয়ন হয়েছে।

রেড ক্রসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৯৫ জন মানুষের মধ্যে ১ জনকে এখন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে, ২০১০ সালে যা ছিল প্রতি ১৫৯ জনের মধ্যে ১ জন। বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুতির হার এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে।

মিজ কামারা বলেন, RCOA অস্ট্রেলীয় সরকারকে তাদের মানবিক কর্মসূচি বা হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় শরণার্থী গ্রহণের বাৎসরিক সংখ্যা বাড়াতে উৎসাহিত করছে।

পাশাপাশি, RCOA সরকারকে টেম্পোরারি প্রটেকশান ভিসায় থাকা শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের পুনর্বাসিত করার জন্য অনুরোধ করছে।

মিজ কামারা মনে করেন যে, শরণার্থীদের জন্যে নিবেদিত রেফিউজি উইক হল আমরা কতটা সহানুভূতিশীল তা দেখানোর একটি ভাল সুযোগ। 

RCOA প্রতিনিধি অলিভার স্লেবা বলেছেন, তিনি এখনও 'গর্বের সঙ্গে' নিজেকে শরণার্থী হিসেবে পরিচয় দেন।

তিনি সবসময় এমন একটি পেশা বেছে নিতে চেয়েছিলেন যার মাধ্যমে মানুষের উপকার করতে পারবেন এবং অন্যান্য শরণার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় বসতি স্থাপনে সহায়তা করতে সক্ষম হবেন।

রেফিউজি উইক সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন


Follow SBS Bangla on .

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:  

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share