একজন নৃতাত্ত্বিক গবেষকের দৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের মাইগ্রেশনের অভিজ্ঞতা

Bangladeshi Community in Ballarat has participated the Begonia Parade

বাংলাদেশিরা অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তর কমিউনিটিতে খুব সহজেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে Source: (Representational) Ershadul Haque Naved

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী অভিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ, ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে কি তাদের কোন বিরোধ দেখা দিচ্ছে নাকি বহুসংস্কৃতির অন্যান্য অভিবাসীদের সাথে মানিয়ে নিচ্ছেন তারা - এই বিষয়টি নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনিতে নৃতত্ব নিয়ে গবেষণারত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পিএইচডি গবেষক মোস্তফা মাহমুদ আলমের সাথে আলাপচারিতা।


মোস্তফা মাহমুদ আলমের পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তু হচ্ছে  অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী অভিবাসীদের অভিজ্ঞতা।

নৃতত্ত্বের ছাত্র মিঃ আলম বলেন,  এই বিষয়ে তার গবেষণার কয়েকটি কারণ আছে।  প্রথমত, বাংলাদেশিদের অভিবাসনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং বাংলাদেশ অভিবাসনের অন্যতম বড়ো উৎস যারা অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী ঠিকানা গড়তে চায়। কিন্তু বাংলাদেশিদের নিয়ে কোন  উল্লেখ্যযোগ্য নৃতাত্ত্বিক গবেষণা হয়নি যতটা তাদের দক্ষিণ এশিয়ান বা ধর্মীয় পরিচয়ে হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশিদের অস্ট্রেলিয়ার টিকে থাকার গল্প, তাদের সাফল্য বা সংগ্রাম, সুখ-দুঃখ আমি প্রত্যক্ষ করেছি যা নিয়ে গবেষণা করা যায়।

তৃতীয়ত, স্টুডেন্ট সেন্টারে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসতে শিক্ষার্থীদের বিপুল আগ্রহ। 

তো এই বিষয়গুলোই বাংলাদেশিদের অভিবাসন নিয়ে গবেষণা করতে আমাকে বেশি আগ্রহী করে তুলেছে।
Bangladeshi Community
মোস্তফা মাহমুদ আলমের পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী অভিবাসীদের অভিজ্ঞতা Source: Supplied
মি: আলম বলেন, "বাংলাদেশিদের মধ্যে পেশার বিরাট বৈচিত্র্য আছে, অনেকেই উচ্চ পেশায় কাজ করছেন, যেমন, চিকিৎসা, প্রকৌশল, আইটি ইত্যাদি। অনেকেই সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন গবেষণাতেও যুক্ত হচ্ছেন। এছাড়া পেশাজীবীদের বাইরে তারা যুক্ত আছেন রাজনীতি, চ্যারিটি, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক  অঙ্গনেও।" 

"বাংলাদেশিরা অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তর কমিউনিটিতে খুব সহজেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে, ব্যাক্তিগত এবং সমষ্টিকভাবেও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে।"

ভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ থেকে আসা বাংলাদেশিরা প্রাথমিকভাবে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন; এ বিষয়ে মি: মোস্তফা বলেন, তারা বাসস্থান, ভাষাগত সমস্যা, মানসিক চাপ, আত্মীয় স্বজনকে ছেড়ে আসার বিষণ্ণ অনুভূতি এবং পাশাপাশি অনিশ্চয়তায় ভোগেন।

"মাইগ্র্যান্টরা যে সময়ে আসেন সেটা তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়, তাই নতুন করে কিছু শুরু করতে গিয়ে, সামাজিক চাপের মধ্যে থেকে তাদের মধ্যে অনেক সময় মানসিক চাপ তৈরী হয়। এছাড়া পারিবার থেকে প্রত্যাশা, যেমন ভালো জব পাবেন কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো তাদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে অনিশ্চয়তা তৈরী করে।"

"তবে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশিরা এইসব চাপকে খুব সুন্দরভাবে মোকাবেলা করতে পারে,  এর কারণ ধারাবাহিকভাবে একটি বিরাট সংখ্যক মাইগ্র্যান্ট আসছে শিক্ষার্থী হিসেবে, এই সময়টাতেই তারা পাশাপাশি কাজ করে খরচ চালাতে পারছে এবং টিকে থাকার মতো স্কিলগুলো রপ্ত করছে।"

বাংলাদেশিরা অস্ট্রেলিয়ার বৈচিত্রপূর্ণ ভাষা-সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে থেকেও নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করছেন। এ প্রসঙ্গে মি: আলম বলেন, "তারা গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহ যেমন বিজয় দিবস, বৈশাখী মেলা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সংস্কৃতিকে চর্চ্চা করছে।"

মিঃ আলম প্রথমদিককার মাইগ্র্যান্টদের অবদানকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রচেষ্টা, সংগ্রাম এবং সাফল্য, সেইসাথে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন নতুনদের জন্য অভিবাসনের পথ খুলে দিয়েছে।"

মিঃ আলম জানান, এক গবেষণায় দেখা গেছে যে গত বছরের অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দুই বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন
আরো পড়ুন:


 


Share