থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে-পড়া কিশোর ফুটবল দলের সব সদস্য ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হলো অবশেষে

থাইল্যান্ডে একটি গুহার ভিতরে ঘুরতে গিয়ে আটকে পড়ে ১২ জন শিশু-কিশোর ও তাদের কোচ। মূলত বৃষ্টির কারণেই গুহার প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যায়, আর তারা বের হতে ব্যর্থ হয়। এর পর একটানা নয় দিন নিখোঁজ থাকার পর, গত ২ জুলাই তাদের খোঁজ পাওয়া যায় ও তাদের জন্য অক্সিজেন, খাবার ও চিকিৎসা-সরঞ্জাম পাঠানো হয়।৮ জুলাই থাইল্যান্ড সরকার শিশুদের উদ্ধারে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তিন দিনের অভিযানে ১০ জুলাই মঙ্গলবার উদ্ধার হন কোচসহ ১২ খুদে ফুটবলার। গুহায় আটকে পড়ার ১৮ দিনের মাথায় শেষ হয় তিন দিনের উদ্ধার অভিযান।

Thailand cave

The teacher (left) who has spent the past 18 days camping out and supporting the families of the missing boys. (Right) one of the boys' mother. Source: AFP, Getty, Supplied

মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের কাছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহা থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা। কম চওড়া আর অনেক প্রকোষ্ঠ থাকায় গুহার ভেতরে চলাচল করা এবং যাত্রাপথের দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন।

গত ২৩ জুন থাইল্যান্ডের স্থানীয় ফুটবল দল উইল্ড বোরের ১২ জন খেলোয়াড় ও তাদের কোচ চিয়াং রাই প্রদেশের থ্যাম লুয়াং গুহায় প্রবেশের পর আটকা পড়ে। খেলোয়াড়দের সবা বয়স ১১ থেকে ১৬ বছর এবং তাদের কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর।
Efforts are underway to rescue trapped members of a youth football team from a flooded cave in northern Thailand.
Efforts are underway to rescue trapped members of a youth football team from a flooded cave in northern Thailand. Source: Twitter/Elon Musk
গুহার ভিতরে ঘুরতে গিয়ে আটকে পড়ে তারা। মূলত ভারী বর্ষণ আর কাদায় গুহার প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যায়, আর তারা বের হতে ব্যর্থ হয়। নিখোঁজের পর গুহার পাশে তাদের সাইকেল এবং খেলার সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর পর একটানা নয় দিন নিখোঁজ থাকার পর, গত ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান। এরপর তাদের জন্য অক্সিজেন, খাবার ও চিকিৎসা-সরঞ্জাম পাঠানো হয়।

গত রবিবার, ৮ জুলাই থাইল্যান্ড সরকার শিশুদের উদ্ধারে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তিন দিনের অভিযানে ১০ জুলাই মঙ্গলবার উদ্ধার হন কোচসহ ১২ খুদে ফুটবলার।

গত দুই দিনের মতো মঙ্গলবারও উদ্ধারকৃতদের সবাইকেই হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

গুহাটির প্রায় এক মাইল দীর্ঘ অংশে পানি জমে থাকার কারণে পুরো উদ্ধার অভিযানই ছিল খুব কষ্টসাধ্য। আটকে-পড়া শিশু-কিশোরদের অনেকেই সাঁতার জানে না। তাদেরকে ডুবুরিরা প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্ধারের জন্য তৈরি করেছেন। প্রত্যেককে বের করে আনার সময় সঙ্গে দুইজন করে দক্ষ নৌবাহিনীর ডুবুরি ছিলেন।

দুই জন ডুবুরিকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে এবং ডুব সাঁতার দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসে শিশুরা। অভিযানে অংশ নেওয়া আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দলের ডুবুরি ইভান কারাদজিক বলেন, এই শিশুদের কারও এভাবে ডুব সাঁতারের অভিজ্ঞতা ছিল না।
Thailand Cave Rescue For Trapped Soccer Team
Adul's letter that was sent out to his family while he was still trapped in the cave. Source: AAP
উদ্ধার অভিযানে পাম্প করে পানি কমানো হয়, ফলে উঁচুনিচু গুহার কিছু জায়গায় হাঁটার মতো অবস্থা তৈরি হয়। কিন্তু এরপরও কিছু জায়গায় স্কুবা সামগ্রী নিয়ে ডুব সাঁতারের প্রয়োজন হয়েছে। এই শিশুদের এ ধরনের সাঁতারের কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা অবশ্য ছিল না।

গুহার প্রবেশপথ থেকে ‘তৃতীয় চেম্বার’ বা অভিযান শুরুর এলাকার দিকে যেতে দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন উদ্ধারকারীরা। ‘তৃতীয় চেম্বার’ থেকে শিশুদের কাছে পৌঁছাতে তাদের যেতে হয় আরও ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার। আটকে পড়া ফুটবলারদের চারটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলে ছিল চারজন। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দলে ছিল তিনজন করে। অভিযানের প্রথম দিনে সবার আগে বের হয়ে আসে ১৪ বছর বয়সী আদুল ‘দুল’ স্যাম। আটকে পড়া ফুটবল দলটির কোচ বের হন তৃতীয় দিনের অভিযানের সবশেষ ব্যক্তি হিসেবে।

উদ্ধার অভিযানটি সহজ ছিল না। গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। বাইরে থেকে ওই ফুটবল দলের অবস্থানস্থল পর্যন্ত দড়ি বাঁধা হয়। প্রত্যেক কিশোরকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়, দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় সামনে থাকা ডুবুরির সঙ্গে। একজন গুহায় বাঁধা দড়ি এবং অক্সিজেনের বোতল নিয়ে যান খুদে ফুটবলারদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে সহায়তার জন্য তাদের পেছনে ছিলেন আরেকজন ডুবুরি।

গুহার সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গাটি ‘টি-জংশন’ নামে পরিচিত। এই এলাকা এতটাই সংকীর্ণ যে এখানে ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাংকও খুলে ফেলতে হয়। এই এলাকার আগে ‘চেম্বার-থ্রি’ নামের প্রকোষ্ঠে বেস ক্যাম্প বানানো হয়েছে। সর্বশেষ ধাপটি অতিক্রমের আগে এখানে কিছু সময় বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হয়।

গুহায় আটকে পড়ার ১৮ দিনের মাথায় ১০ জুলাই মঙ্গলবার শেষ হয় তিন দিনের উদ্ধার অভিযান।


Share
Published 11 July 2018 6:20pm
Updated 11 July 2018 6:25pm
By Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends