নিপীড়ক স্বামীর কাছ থেকে পালাতে পাঁচ সেন্টের পয়সা জমা করেছিলেন ঋতু

ফেডারাল বাজেটে অভিবাসী ও শরণার্থী নারীদের আমলে আনার বিষয়টিকে জাতীয় পর্যায়ে "গেম চেঞ্জার" বলছে পারিবারিক সহিংসতাবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন।

Domestic violence victim

Source: Pixabay

নিপীড়ক স্বামীর সাথে আর বাস করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে পয়সা জমা করতে শুরু করেন ঋতু ধর। বিয়ের পর নতুন বউ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন তিনি। নতুন এই দেশটিতে জীবন-যাপন নিয়ে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না।

মিস ধরকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি স্বামীর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন — না ছিল অর্থ, না চাকুরি, বন্ধু, গাড়ি চালানোর সক্ষমতা; তদুপরি তিনি অস্থায়ী ভিসায় ছিলেন তখন। 

নতুন বিয়ে করা স্বামী, যেমনটি তিনি ভেবেছিলেন, তেমন ছিলেন না। তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতন না করলেও জবরদস্তিমূলক নিয়ন্ত্রণ বা কোয়ের্সিভ কন্ট্রোল করতেন বলে জানান মিস ধর।
Ritu Dhar came to Australia on a temporary visa, and originally struggled in the new surroundings.
Ritu Dhar came to Australia on a temporary visa, and originally struggled in the new surroundings. Source: Supplied
দু’বছর পর, তার ছেলের জন্মের পর, তিনি বুঝতে পারেন যে, তাকে পালাতে হবে।

এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন, "আমি আতঙ্কিত ছিলাম। নিজের জীবন আর সন্তানের জীবন নিয়ে আমি অনেক শঙ্কিত ছিলাম।"

সেই থেকে তিনি পরিকল্পনা করতে থাকেন। বাড়ির আশপাশে পাঁচ সেন্টের পয়সা পড়ে আছে দেখলেই সেটা তুলে জমানো শুরু করে দেন তিনি।

"আমি পাঁচ সেন্টের মূল্য বুঝেছিলাম। জানতাম, পাঁচ সেন্ট করে জমিয়ে এক ডলার হয়। অর্থের মূল্য আমি উপলব্ধি করেছিলাম, আর উপলব্ধি করেছিলাম যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।"

"আপন সন্তানকে কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে আমাকে আমার উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাওয়া অতি জরুরী।"

এক বছরের সন্তানকে সাথে নিয়ে ক্ষতিকর বৈবাহিক জীবন থেকে পালাতে তিনি তাঁর জমানো পাঁচ সেন্টের কয়েনগুলোর বিশ ডলার অর্থমূল্যের সঞ্চয়কে কাজে লাগান।
আজ সেই ঘটনার ১৬ বছর পর, মিস ধর এখন ভিক্টরিয়ার একজন শিক্ষা-সহায়িকা। তাঁর গাড়ি আছে, তিনি বাড়িও কিনেছেন।

মিস ধর জমানো পয়সা দিয়ে পালাতে পেরেছিলেন। তাঁর মতে, তখন যদি সরকারের নতুন স্কিমটি  থাকতো তাহলে  টেম্পোরারি ভিসায় থাকা অনেক নারীর উপকার হতো যারা পারিবারিক সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়।

গত ১১ মে, মঙ্গলবারের বাজেট ঘোষণায় সরকার আগামী তিন বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা অভিবাসী ও শরণার্থী নারীদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে।

এই অর্থ বরাদ্দ তৃণমূল পর্যায়ের অভিবাসী ও শরণার্থী নারীদের  সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে তহবিল যোগাবে। তদুপরি ১০ মিলিয়ন ডলারের বর্ধিত বরাদ্দের মাধ্যমে একটা পাইলট প্রোগ্রাম পরিচালিত হবে।

টেম্পোরারি ভিসায় অবস্থানরত পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীরা এ থেকে উপকার পাবেন। এই প্রোগ্রামের আওতায় নারীরা ৩,০০০ ডলার পর্যন্ত খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য দরকারি খরচের যোগান পাবেন।
ভিসা স্ট্যাটাসের কারণে যে নারীরা সামাজিক পরিষেবা ও কল্যাণ ভাতা পাচ্ছেন না, এর মাধ্যমে তাঁদের সেসবের যোগান দেওয়া হবে, বলছে সরকার।

মিস ধরের মতে, " সরকার যা করছে তার ফলে ১৬ বছর আগে আমি যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম, তেমন শোচনীয় পরিস্থিতিতে থাকা নারীদের উপকার হবে।"

অস্থায়ী ভিসায় থাকা নারীদের আইনি ও অভিবাসন সহায়তা দিতে দেশের নয়টি কমিউনিটি ও নারী সংগঠনকে অর্থ তহবিল দেওয়া হবে।

পারিবারিক সহিংসতাবিরোধী সংস্থাগুলো সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে; যদিও তারা বলছে, এটা অভিবাসী ও শরণার্থী নারীদের জন্য আরো আগে দরকার ছিলো

ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এনএসডব্লিউর রিসার্চ এন্ড পলিসি ম্যানেজার রেনাটা ফিল্ড বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসী ও শরণার্থী নারীদের সহায়তায় গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।

এই শ্রেণীর নারীরাই অধিক হারে সহিংসতার শিকার হয়ে আসছেন। তাঁরা কল্যাণ ও  পরিষেবার অধিকার পান না এবং ভাষা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,

“প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল হলেও এটা দারুণ যে অন্তত পাওয়া যাচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন,

“বিশেষ করে অস্থায়ী ভিসায় থাকা নারীদের জন্য কল্যাণ ও পরিষেবা পাওয়া খুব কঠিন। এদেশে সন্তান-সন্ততি থাকায় তারা অনেকে দেশ ছেড়ে যেতে পারেন না; অথচ তাদের পরিষেবা সহায়তা জরুরী দরকার।”

অভিবাসী ও শরণার্থীদের সহায়তাকারী সংস্থা AMES Australia এর ক্যাথ স্কার্থ বলেন, অস্থায়ী ভিসার নারীরা অনেক সময় তাদের সঙ্গীর কাছ থেকে ডিপোর্টেশন বা অস্ট্রেলিয়া থেকে বহিষ্কার-এর হুমকি পেয়ে থাকেন। নিজেদের অধিকারের বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা তাই নারীদের জন্য খুব দরকার।
তিনি আরও বলেন,

“সহিংসতার শিকার অস্থায়ী ভিসায় থাকা নারীদের জন্য এটা সত্যিই খুব আতঙ্কজনক ব্যাপার।”

“আর তাই নিপীড়ন রোধ করা শুধু নয়; ‘আমি যা চাই চাই, তা না করলে ইমিগ্রেশনে বলে তোমাকে দেশ থেকে বের করে দেব’ — এমন হুমকি থেকেও নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।”
inTouch Multicultural Centre Against Family Violence এর চিফ একজিকিউটিভ অফিসার মিশাল মরিস বলেন, কোভিড মহামারীর প্রভাবে পারিবারিক সহিংসতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক সংকটকালে তার সংগঠনের কাছে সাহায্যের অনুরোধ অপ্রত্যাশিত হরে বেড়েছে।  এমতাবস্থায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি যে, নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে অথচ কোনো প্রকারের সরকারি সাহায্যের যোগ্য তারা নয়। তারা নিতান্তই নিরুপায়, কেননা, কোভিডের কারণে তারা বাড়িতে যেতেও পারছে না।”

বিশেষ করে ভিক্টোরিয়ার নারীরা লকডাউনের শিকার হয়েছে বেশি, যা তাদের রোজগারে প্রভাব ফেলেছিল।

এসবিএস নিউজকে তিনি আরো জানান, "তাদের কল্যাণ ভাতা ও দাতব্য সাহায্যের উপর সত্যিই নির্ভর করে বাঁচতে হয়েছে।

বাজেটে নির্দিষ্টভাবে অভিবাসী ও শরণার্থী নারীদের যুক্ত করাকে তাই তিনি “গেম চেঞ্জার” বা পরিস্থিতি পরিবর্তনকারী হিসেবে  মত দেন। তিনি আরও বলেন,

"তার মানে হলো যে বৃহত্তর পরিসরে তাদের সংকট (পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে) মানুষ বুঝতে পেরেছে তা আলোচনায় উঠে আসছে।"

"আশা করি এই ক্ষেত্রে আরো অধিক অর্থ বরাদ্দ করা হবে"

আপনার পরিচিত কেউ কিংবা আপনি নিজে যদি যৌন নিপীড়ন, ঘরোয়া কিংবা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন, তাহলে কল করুন 1800RESPECT এ 1800 737 732 নম্বরে কিংবা ভিজিট করুন . জরুরি ও গুরুতর পরিস্থিতিতে 000 নম্বরে কল করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 19 May 2021 3:43pm
Updated 19 May 2021 5:03pm
By Rashida Yosufzai
Presented by Pychimong Marma


Share this with family and friends