ভারতে আবার দলিত কন্যাকে গণধর্ষণের পর খুন ,উত্তাল রাজনীতি

ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত কন্যার নৃশংস গণধর্ষণ ও মৃত্যুতে যখন ভারতজুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, ঠিক তখনই রাজস্থানে সামনে এসেছে আরও এক গণধর্ষণের ঘটনা।দুই নাবালক-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে,২ নাবালিকাকে অপহরণ করে লাগাতার ৩ দিন ধরে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, বারন থেকে অপহরণ করার পর রাজস্থানের জয়পুর ও কোটাতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, জবানবন্দিতে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে দুই কিশোরী।

Balmiki people take part in a vigil and protest to seek justice for the victim of alleged gang rape in Uttar Pradesh state, in Dharamsala, India

Balmiki people take part in a vigil and protest to seek justice for the victim of alleged gang rape in Uttar Pradesh state, in Dharamsala, India Source: EPA

জানা গেছে, ১৩ ও ১৫ বছরের মেয়ে দুটির বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন,দুই কিশোর,তাঁর দুই কন্যাকে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে জেলার বাইরে নিয়ে যায়।এরপর তাদের প্রথমে জয়পুর ও পরে কোটায় নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানেই তিনদিন ধরে ওই দুই নাবালক ও আরও তিনজন যুবক মিলে তাঁর মেয়েদের ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেছেন নিগৃহীতার বাবা। ২১ সেপ্টেম্বর মেয়ে দুটিকে পাওয়া যায় কোটা থেকে।

এদিকে পুলিশের দাবি, বয়ান দিতে গিয়ে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে দুই কিশোরী। এ দিকে, তারা সংবাদমাধ্যমে ক্যামেরার সামনে নিজেরাই জানিয়েছে যে, তাদের গণধর্ষণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে কঠিন মূল্য চোকাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিগৃহীতার পরিবার।

মেয়ে দুটির বাবা পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর অভিযুক্তদের থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। দুই কিশোরী পুলিশের কাছে সব ঘটনা জানালে, অভিযুক্তরা তাদের পুলিশের সামনেই হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। এরপর পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, দুই কিশোরী ধর্ষিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ১৯ বছর বয়সী দলিত মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা গোটা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে নির্যাতিতার দেহ চুপিসারে দাহ করেছে পুলিশ। কার নির্দেশে এমনটা করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রতিবাদ জানাতে যাওয়ায় উত্তরপ্রদেশে হাথরসের পথে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি এবং সাংসদ রাহুল গাঁধীকে।তার আগে দেওয়া হয়েছে গলাধাক্কা।উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ধাক্কায় মাটিতে পড়েই যান রাহুল গাঁধী।

হাথরসের নির্যাতিতার বাড়ি যেতে না দিয়ে রাহুলকে মাঝপথ থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।তার আগে পথের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে রাহুলের তর্কাতর্কি শুরু হয়। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার রাহুলকে বলেন,আপনি ১৪৪ ধারা ভাঙছেন।পাল্টা রাহুল গাঁধী বলেন, ১৪৪ ধারার অপব্যবহার করছেন আপনারা।

এর আগে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী-সহ কংগ্রেস নেতা-নেত্রীদের প্রতিনিধি দলের একটি কনভয় হাথরসের পথে রওনা হয়। মাঝপথে তাদের প্রথমে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু নাছোড় রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গাঁধী স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হেঁটেই রওনা দেন হাথরসের দিকে।রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সঙ্গে ছিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও।

দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ হাইওয়ের উপরেই তাঁদের কনভয় আটকে দেওয়া হয়।পরে গ্রেফতার করা হয় কংগ্রেস সাংসদকে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের যুক্তি কোভিডের কারণেই রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ জারি রয়েছে।সেই কারণেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর কনভয় আটকানো হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে প্রবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল।সেই নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। দাবি, রাজ্য বহু পুলিশকর্মী করোনা আক্রান্ত।

এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে গণধর্ষণে মৃত দলিত কন্যার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্ট বলছে, নিগৃহীতা মৃত তরুণীর শিরদাঁড়ার হাড় ভাঙা ছিল। এবং তাঁকে যে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে ময়নাতদন্তের সময়।আলিগড় হাসপাতাল থেকে গুরুতর অবস্থায় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল নিগৃহীতা দলিত কন্যাকে।

মঙ্গলবার ভোরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর সেই হাসপাতালেই ময়নাতদন্ত হয় মৃতার দেহের।রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাথরসের নির্ভয়া'র মৃতদেহের সার্ভাইক্যাল ভার্টিব্রায় ফ্র্যাকচার পাওয়া গিয়েছে।এর পাশাপাশি রিপোর্টে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা ২০ বছরের দলিত কন্যাকে শ্বাসরোধেরও চেষ্টা করেছিল। তবে সেই কারণে তাঁর মৃত্যু হয়নি। ১৪ সেপ্টেম্বর উচ্চবর্ণের চার যুবক ওই দলিত কন্যাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।তরুণীর মৃত্যুর পরে অপরাধীদের দ্রুত ও কঠোরতম শাস্তির প্রতিবাদে মুখর গোটা দেশ।

এদিকে উত্তরপ্রদেশে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় ফের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, দলিতদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে।এদিকে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে আবার দলিতদের বাড়িতে খাওয়া হয়। এভাবেই তীব্র কটাক্ষেপ্র ধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।উল্লেখ্য,পশ্চিমবঙ্গে জনসংযোগে দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায়কেই প্রথমে বেছে নিয়েছিল বিজেপি।

লোকসভা ভোটের আগে দলীয় কর্মসূচিতে এসে নকশালবাড়ির এক দলিত পরিবারে মধ্য়াহ্নভোজ সেরেছিলেন তত্কালীন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আদিবাসীর ঘরে অমিত শাহের পাত পেড়ে বসে ভাত-ডাল-তরকারি খাওয়ার ছবি সামনে আসতেই হই হই পড়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে বহুবারই আদিবাসীদের ঘরে বিজেপি নেতাদের আতিথেয়তা গ্রহণের ছবি সামনে এসেছে।

আর,ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, জনসংখ্যার নিরিখে দেশের বৃহত্তম রাজ্যে, উত্তরপ্রদেশে ধর্ষণ-সহ যৌন হেনস্থার ঘটনার হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। সাধারণ দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন শাসকদলের নেতা, বিধায়ক মায় অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও।মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পূর্বসূরি অখিলেশ যাদবের মুখ্যমন্ত্রিত্বের শেষ পর্বে ২০১৬-র এপ্রিল থেকে ২০১৭-র জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ধর্ষণের ২ হাজার ৯৪৩টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল।

যোগী আদিত্যনাথের জমানায়,২০১৭-র এপ্রিল থেকে ২০১৮-র জানুয়ারি, প্রথম ১০ মাসেই তা ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৭০৪টি। অগস্টে প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা, এনসিআরবি রিপোর্ট জানাচ্ছে,২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৮৫৩। যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক।এর মধ্যে ধর্ষণের মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫টি। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক প্রায় ১১ জন মহিলা ধর্ষিতা হন উত্তরপ্রদেশে। রিপোর্ট বলছে, এঁদের মধ্যে ৩৪ জনকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে।


Share
Published 1 October 2020 10:32pm
By Partha Mukhapadhdhaya
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends