করোনাভাইরাস-পরবর্তী সময়ে কেমন হবে অস্ট্রেলিয়ার অস্থায়ী এবং স্থায়ী অভিবাসন?

করোনাভাইরাস-পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছেন কেউ কেউ। দেশটির অস্থায়ী এবং স্থায়ী অভিবাসনের ক্ষেত্রে এর কী রকম প্রভাব পড়বে?

migrants

Source: AAP

করোনাভাইরাস-পরবর্তী পর্যায়ের ‘নিউ নরমাল’ এর দিকে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। অভিবাসন প্রোগ্রামের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নিয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিদেশী অভিবাসন ৮৫ ভাগ কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রেট ডিপ্রেসন বা মহামন্দার পর এখন জনসংখ্যার দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বড় ধরনের ক্রান্তিলগ্নের মুখোমুখি হচ্ছে।

লেবার দলের ক্রিস্টিনা কেনেলি বিতর্কের সূত্রপাত করেন। তার লক্ষ্য অস্থায়ী ভিসাধারীরা। সীমান্ত পুনরায় খুলে দেওয়া হলে অভিবাসন সংখ্যা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তাই, প্রশ্ন উঠেছে, অস্থায়ী ও স্থায়ী অভিবাসীদের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে? অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে তাদের কী রকম ভূমিকা রয়েছে?

সংখ্যার বিচারে অস্থায়ী বনাম স্থায়ী অভিবাসন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন প্রোগ্রাম অস্থায়ী ভিসাধারীদের প্রতিই বেশি নির্ভর করছে। এর বিপরীতে, স্থায়ী ভিসাধারীদের সংখ্যা কমছে।

অস্ট্রেলিয়ায় ২.১ মিলিয়ন অস্থায়ী ভিসাধারী বাস করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, স্বল্প-মেয়াদী কর্মী এবং ওয়ার্কিং হলিডে-মেকাররা। গত এপ্রিল পর্যন্ত এদের সংখ্যা স্থায়ী অভিবাসীদের সংখ্যার (১.৭৮ মিলিয়ন) চেয়ে বেশি।
Commuters are seen at Town Hall train station in Sydney, Friday, August 23, 2019. A train breakdown at Town Hall station is causing delays on the network. (AAP Image/Peter Rae) NO ARCHIVING
File photo Source: AAP
প্রতিবছর স্থায়ী ভিসা প্রদানের ক্যাপ বা সর্বোচ্চ সংখ্যা গত বছর ৩০,০০০ কমিয়ে দিয়ে ১৬০,০০০ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। বড় বড় শহরগুলো থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে ফেডারাল সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এটা তারই বাস্তবায়নের একটি অংশ। স্থায়ী ভিসার এই ক্যাপ ২০১৮-১৯ সালে প্রদান করা মোট স্থায়ী ভিসার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সে বছর ১৬০,৩২৩ টি স্থায়ী ভিসা প্রদান করা হয়েছিল। এর আগে ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরে সর্বোচ্চ ১৯০,০০০ স্থায়ী ভিসা প্রদান করা হয়েছিল।

এদিকে, আন-ক্যাপড বা কোটা-বিহীন অস্থায়ী অভিবাসীদের সংখ্যা ২০১১ সালে ছিল ১.৬ মিলিয়ন। আর, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ২.৪ মিলিয়নে উপনীত হয়।
ভিসা ইস্যুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় পার্মানেন্ট স্ট্রিমের জন্য অভিবাসীদের অপেক্ষার কাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

ফেডারাল সরকার আশা করেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রিজিওনে অভিবাসীদেরকে ঠেলে দিতে। সেজন্য তারা গত বছরের নভেম্বরে দুটি নতুন ভিসাও চালু করেছে। এগুলোর শর্ত হচ্ছে, স্থায়ী অভিবাসনের জন্য আবেদন করার আগে রিজিওনাল এলাকায় দুই বছর বাস করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান কর্মীদের কী হবে?

OECD অনুসারে, অস্ট্রেলিয়াতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী কর্মী-বাহিনী রয়েছে। এক্ষেত্রে সংখ্যার দিক দিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এমনকি করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারী শুরু হওয়ার আগেই অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়ন্স "Underclass of exploited temporary visa holders" নিয়ে সতর্ক করেছে।

নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়নন্স। তারা বলছে, বিদেশী কর্মীদের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছে নিয়োগদাতারা। অস্ট্রেলিয়ান কর্মীদেরকে কাজ না দিয়ে তারা সস্তায় বিদেশী কর্মীদেরকে কাজ দিচ্ছে।

Image

কিন্তু, ফেডারাল সরকার জোর দিয়ে বলছে যে, অস্ট্রেলিয়ানরা যেন সর্বদাই কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার লাভ করে সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত করতে চায়।
সেজন্য ৪৫৭ ভিসার স্থলে “আরও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি” হাতে নেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়ন্স (ACTU) স্থায়ী অভিবাসনের উপর আরও বেশি অগ্রাধিকার প্রদানে চাপ দিচ্ছে।

ভিসাধারীদের উপর এর কী প্রতিক্রিয়া পড়বে?

স্থায়ী অভিবাসীদের তুলনায় অস্থায়ী ভিসাধারীরা অনেক কম অধিকার ভোগ করে থাকেন।

এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে।

স্থায়ী অভিবাসী এবং বহু নিউ জিল্যান্ডারের শর্ত-বিহীন কাজের অধিকার রয়েছে। তারা নতুন জবকিপার এবং জবসিকার স্কিমের মতো সরকারি পেমেন্ট পাওয়ারও উপযুক্ত। কিন্তু, অস্থায়ী ভিসাধারীরা এ রকম সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ততা লাভ করেন নি। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে ব্যাপকভাবে কর্মহীনতা তৈরি হওয়ায় তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আর্থিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছেন।
There's debate about the future of Australia's migration program.
There's debate about the future of Australia's migration program. Source: AAP
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, অস্থায়ী অভিবাসীদের মধ্যে যারা নিজেরাই নিজেদের ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন না তারা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।

যে-সব অস্থায়ী ভিসাধারী অস্ট্রেলিয়ায় অন্তত ১২ মাস ধরে বসবাস করছেন তাদেরকে সুপারঅ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে অর্থ ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে ফেডারাল সরকার।

অস্থায়ী অভিবাসীরা নিজেদের ব্যয় নিজেরাই বহন করবেন বলে আশা করা হয়। তবে, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ স্পেশাল ফাইনান্সিয়াল হার্ডশিপ পেমেন্টের জন্য উপযুক্ততা লাভ করবেন।
অস্থায়ী অভিবাসীদের স্থায়ী অভিবাসনের জন্য জমা হওয়া আবেদনগুলো দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করতে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় মাল্টি-কালচারাল গ্রুপ FECCA আহ্বান জানিয়েছে।

FECCA এর সিইও মোহাম্মদ আল-খাফাজ বলেন,

“সবার কাছে আমরা এই বার্তাটি পৌঁছে দিতে চাই যে, তাদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় স্বাগতম। আর, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখুক, সেটাই আমরা চাই।”

অর্থনীতিতে অভিঘাত

সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে মূলত ১.৫ শতাংশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি রয়েছে। আর, এর পেছনে মূল চালিকা শক্তি হলো অভিবাসন, প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ বৃদ্ধিই হয়েছে এর মাধ্যমে।

গ্রাটান ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ জন ড্যালি এসবিএস নিউজকে বলেন, অভিবাসনের ফলে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে প্রতিবছর সার্বিকভাবে প্রায় ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটে।

এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৫৭০,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অবদানও, যা কিনা বার্ষিক প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি আবুল রিজভি বলেন, অভিবাসনের উপরে প্রত্যাশিত আঘাত হানা হলে তা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন,

“অভিবাসন কমানো হলে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বের হয়ে আসা আরও কঠিন হবে।”

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 11 May 2020 7:41pm
Updated 12 May 2020 2:27pm
By Tom Stayner
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends