ভূমিকম্প বিষয়ক নানা তথ্য

প্রতিবছর বিশ্বের নানা স্থানে অসংখ্যবার ভূমিকম্প হয়। ছোট-বড় নানা মাত্রার এই ভূমিকম্পগুলোরে কোনো কোনোটির আঘাতে ঘটে ব্যাপক লোকক্ষয়, ঘরবাড়ি হারিয়ে দুর্দশা-কবলিত হয় বহু মানুষ।

Fox Glacier in New Zealand's South Island

A huge earthquake fault running up NZ's Southern Alps is overdue for a big shake, researchers say. Source: AAP

প্রতিবছর বিশ্বে অসংখ্যবার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর কোনো কোনোটি ছোট আবার কোনো কোনোটি অনেক বড়।

ভূমিকম্প অতীতেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এটি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। তবে, ভূমিকম্প সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকলে এবং সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে এর ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবী জুড়ে বছরে কয়েক লাখ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এগুলোর মধ্যে গড়ে ১৭টি বড় ধরনের ভূমিকম্প রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার বেশি। আট মাত্রার ভূমিকম্প হয় বছরে গড়ে এক বার। মৃদু ভূমিকম্পগুলো অনেক সময় সাধারণভাবে বোঝা যায় না। প্রত্যন্ত ও জনবিরল অঞ্চলে সংঘটিত হওয়া ভূমিকম্পগুলো সাধারণ মানুষ খেয়াল করে না।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশি ভূমিকম্প হয়। তবে, এগুলোর বেশিরভাগই বোঝা যায় না। মাত্র কয়েকশ’ ভূমিকম্পই বোঝা যায়, যেগুলোর মাত্রা ৩ এর বেশি। আর ৪ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প মাত্র ১৫-২০টি।
A man walks around his house damaged in the Lombok quake
The death toll from the earthquake on the island of Lombok has climbed to 436, officials say. Source: AAP
ভূমিকম্প বিষয়ক আশ্চর্যজনক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ইউ.এস. জিওলজিক্যাল সার্ভের

এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় ১৫৫৬ সালে সেন্ট্রাল চীনে। এতে আনুমাণিক ৮৩০ হাজার (আট লক্ষ ত্রিশ হাজার) লোক মারা যায়। এছাড়া, ১৯৭৬ সালে চীনের ট্যাংশানে ভূমিকম্পে মারা যায় ২৫০ হাজারেরও বেশি (আড়াই লাখেরও বেশি) লোক।

এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে চিলিতে। ২২ মে ১৯৬০-এর এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫। আর, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয় ২৮ মার্চ ১৯৬৪ তারিখে। আলাস্কার প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ডে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২।

দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে। ২০০৯ সালের ১১ মার্চ জাপানের উত্তর-পূর্বে একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৯। এর ফলে পৃথিবীর ভরের বণ্টনে পরিবর্তন ঘটে এবং এর প্রভাবে সামান্য দ্রুত গতিতে পৃথিবী ঘুরতে থাকে। সে কারণেই দিনের দৈর্ঘ্য কমে গিয়েছিল। সেই দিনটি অন্যান্য দিনের চেয়ে ১.৮ মাইক্রো সেকেন্ড ছোট ছিল।

সাগরে ওঠা সুনামির ঢেউ এবং জোয়ার এক বিষয় নয়। জোয়ার-ভাঁটা ঘটে চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যকার মাধ্যাকর্ষণ, অভিকর্ষ এবং মহাকর্ষ বলের কারণে। কিন্তু, সুনামির সৃষ্টি হয় সাগরতলে সংঘটিত ভূ-কম্পনের কারণে কিংবা ভূমিকম্পের কারণে স্থলক্ষেত্র থেকে ভূমিধস ঘটলে।
Japan earthquake
Hokkaido conducted a shutdown of all its fossil fuel-fired power plants following the earthquake. Source: AAP
ভূমিকম্পের কারণে সরে যায় শহর। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহর প্রত্যেক বছরে গড়ে দুই ইঞ্চি করে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে সরে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে সান অ্যানড্রেয়াস ফল্টের দুটো দিক ক্রমশ একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত তিন মিলিয়ন বছর ধরে এ রকমটি ঘটছে। এই হার মানুষের নখের বৃদ্ধির হারের সমান। এই গতিতে চলতে থাকলে এই দু’টি শহর ১৫ মিলিয়ন বছর পর একত্রিত হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুই শহরের মধ্যের দূরত্বের তারতম্যের পেছনেও ভূমিকম্পের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল চিলির কনসেপসিওন শহরে। সেই ভূমিকম্পে পৃথিবীর শক্ত উপরিভাগে ফাটল ধরে এবং শহরটি ১০ ফুট পশ্চিমে সরে যায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের আগে স্থির পানি থেকে গন্ধ বের হয়। তাদের মতে, ভূমিকম্পের আগে খাল-বিল, পুকুর, হ্রদ ও জলাশয়ের স্থির পানি থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে। এমনকি সেই পানি সামান্য উষ্ণও হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্লেট সরে যাওয়ার কারণে মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তার কারণেই নাকি এটা হয়ে থাকে।
Survivors leave Tohoku a day after the March 11, 2011 earthquake and tsunami.
Survivors leave Tohoku a day after the March 11, 2011 earthquake and tsunami. Source: Warren Antiola/Flickr
ভূমিকম্পের পরেও পানিতে ঢেউ উঠতে পারে, পুকুরে কিংবা সুইমিং পুলের পানিতে ঢেউ দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কয়েক ঘণ্টা ধরে অভ্যন্তরীণ এই পানিতে তরঙ্গ অব্যাহত থাকতে পারে।

ভূমিকম্পের কারণে যাতে বাড়িঘর ধসে না যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই ইনকা আমলের স্থাপত্য ভবন ও জাপানি প্যাগোডা নির্মিত হয়েছিল।

বেশিরভাগ ভূমিকম্পের উৎস প্রশান্ত মহাসাগর। পৃথিবীর যতো ভূমিকম্প হয় তার অধিকাংশ, শতকরা ৯০ ভাগই হয় রিং অফ ফায়ার এলাকা জুড়ে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত।
Everest is seen from the way to Kalapatthar in Nepal
Source: AAP
ভূমিকম্পের আঘাতে খাটো হয়ে যায় বিশ্বের উচ্চতম পর্বত-শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। নেপালে ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঐ ভূমিকম্পের কারণে কমে গিয়েছিল হিমালয়ের অনেক পর্বতের উচ্চতা। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কমে গিয়েছিল এক ইঞ্চির মতো।

Follow SBS Bangla on .


Share
Published 14 September 2018 2:55pm
By Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends