ভিক্টোরিয়ার হিউম সিটির 'আর্টস অ্যাওয়ার্ড ২০২০' পেলেন বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী সঙ্গীত শিল্পী তিথি

বাংলাদেশে জাতীয় পুরষ্কার জয়ী সংগীত শিল্পী নিঘাত সুলতানা তিথি ভিক্টোরিয়া রাজ্যের হিউম সিটি কাউন্সিলের ২০২০ সালের জন্য আর্টস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। মেলবোর্নের গানের দল 'গানওয়ালা'র সাথে যুক্ত তিথি তার সংগীত চর্চ্চা এগিয়ে নিতে চান অনেকদূর।

Nighat Sultana Tithi received Hume City Arts Award 2020

Nighat Sultana Tithi received Hume City Arts Award 2020 Source: Nighat Sultana Tithi

হিউম সিটি কাউন্সিল প্রতি দু’বছরে একবার সেখানকার আর্টিস্টদের এই অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। থেকে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, এ বছরে ৮৪ প্রতিযোগীর মধ্যে ১৭ জনকে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে তিথি একজন। 

এর আগে বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে নজরুল সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পুরষ্কার জিতেছিলেন নিঘাত সুলতানা তিথি, এছাড়াও তার ঝুলিতে আছে বেশ কিছু জাতীয় পুরস্কার। 

এই গুণী শিল্পী এসবিএস বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানান, দেশের বাইরে এরকম একটি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি তার জন্য আনন্দেরই শুধু নয়, এটি আরও বেশি কাজ করে যেতে উৎসাহ দেবে তাকে। 

অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি সম্প্রতি হিউম সিটি কাউন্সিলে বাসা বদল করেছি। এ বছরের শুরুর দিকে জানতে পারি এরকম একটি আর্ট এওয়ার্ড দেয়া হয় প্রতি দু বছর পর পর। আমি আসলে খুব বিশেষ কিছু না ভেবে আবেদন করেছিলাম। আমার নিজের গান গাওয়ার হিস্ট্রি, কোথায় গান শিখেছি, আমার গানের যা অর্জন এবং পোর্ট ফলিয়ো হিসেবে আমার গানের কিছু ইউটিউব লিংক সাবমিট করেছিলাম আবেদনের সাথে।”

“তো আমার গান, এবং গানের চর্চা মূলত বাংলা গানেই। যে গানগুলো পাঠিয়েছিলাম, সেগুলোও সব বাংলা গান। সেজন্যে আমি আসলে ভাবিনি যে আমি এই অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য মনোনীত হবো। তারপরেও অংশ নিয়েছি, যেহেতু এখানে অভিবাসীদের নিজ সংস্কৃতি চর্চার জন্য উৎসাহও দেয়া হয়। এ বছর ৮৪ জন অংশ নিয়েছিল, তার মধ্য থেকে তারা ১৭ জনকে চূড়ান্ত করেছে।"

সংগীত চর্চ্চায় পারিবারিক উৎসাহ এবং সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিথি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "পুরোপুরি পারিবারিক উৎসাহেই গান শিখতে শুরু করা। আমার বাবা-মা খুবই সংস্কৃতিপ্রেমী ছিলেন, তারা দুজনেই খুব ভালো গান গাইতেন, গান শুনতে ভালোবাসতেন, অসংখ্য গানের ক্যাসেট ছিলো বাড়িতে তাদের সংগ্রহে, যেগুলো শুনে শুনে আমরা তিন বোন বড় হয়েছি। একদম ছোটবেলায় আসলে কবিতা আবৃত্তি দিয়ে আমাদের তিন বোনের সংস্কৃতি জগতে পা রাখা।”
Nighat Sultana Tithi received Hume City Arts Award 2020
Nighat Sultana Tithi received Hume City Arts Award 2020 Source: Nighat Sultana Tithi
তিনি বলেন, “মা খুব কবিতা ভালোবাসতেন, আবৃত্তি করতেন। তাঁর কাছেই আমাদের কবিতা আবৃত্তি শেখা। গানের হাতেখড়ি আমার বাবার কাছে, বাবা হারমোনিয়ামে সা-রে-গা-মা এবং একটি গান তুলে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিখেছি। আরো পরে ছায়ানটে নজরুল সঙ্গীত শিখেছি। তবে আমার গান শেখা, গান নিয়ে যত অর্জন সবই আমার মায়ের কষ্ট, মায়ের স্যাক্রিফাইস এবং সাধনার ফল।” 

তবে তিথি বলেন, প্রবাসে নিজ সংস্কৃতি চর্চ্চা অব্যাহত রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং।   

"প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্যস্ততা, যেহেতু আমার পেশাগত দিকটি ভিন্ন, দিনের অধিকাংশ সময় অফিসে এবং যাতায়াতে পার হয়ে যায়। সংসার-সামাজিকতা সব কিছু মিলে যেকোন মানুষ যিনি পেশা হিসেবে অন্য কোন কিছু করছেন, তাদের জন্য সংস্কৃতি চর্চা অনেকটা অসম্ভব একটা ব্যাপার।”

“তারপরেও করছি, খুব ভালোবাসা এবং তাঁর চেয়েও জরুরী হলো খুব ডেডিকেশান, ইচ্ছাশক্তি - সেক্ষেত্রে কোন একটা উপায় হয়ত করে নেয়া যায়। প্রবাসে থেকে বাংলা সংস্কৃতি চর্চা অনেকাংশেই আরো বেশি কঠিন। কারন শিল্পচর্চার আসলে অনেক মোটিভেশান প্রয়োজন। পরিবেশের ব্যাপারটা চিন্তা করুন - একটা বিশেষ দিনে যেমন স্বাধীনতা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ - এই সব দিনে দেশে চারপাশ জুড়ে উৎসব হয়, মাইকে গান বাজতে থাকে। সেই উৎসবের হাওয়া এসে লাগে মনে। এখানে ব্যাপারটা তা নয়। আবহাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। তারপরে বাংলা কমিউনিটি চেষ্টা করে বিভিন্ন আয়োজনের। সেটা ভালো লাগে।"  

নিঘাত সুলতানা তিথি মনে করেন এই অ্যাওয়ার্ড সংগীত চর্চ্চায় তাকে বেশ সাহায্য করবে।  

তিনি বলেন, "এই অ্যাওয়ার্ড থেকে আসলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রথম যেটা পেলাম তা হলো একটা দারুণ মোটিভেশান, যা একজন শিল্পীর জন্য জরুরী একটা ব্যাপার। It is like a reminder as to what I am. ছোটবেলার যে আমি, যার সবটা জুড়ে থাকতো গান, একের পর এক অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতা, পুরষ্কার, প্রাপ্তি - এইসব প্রায় ভুলে যাওয়া কথা মনে পড়ে গেলো।”

তিথি জানান এই অ্যাওয়ার্ডের অর্থ তিনি কাজে লাগাতে চান। 

"হিউম অ্যাওয়ার্ডের বা গ্র্যান্টের যে অর্থ পাচ্ছি সেটা দিয়ে ইচ্ছা আছে, হয়ত আমার বর্তমান যে হোম স্টুডিয়ো আছে, সেটার আরো কিছু আপগ্রেড করতে পারি। আরো কিছু মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট শেখার ইচ্ছা আছে, যেটা আমি ইতিমধ্যে শুরু করেছি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি আরো শিখতে চাই।" 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিথি বলেন, এমন কোন যুতসই পরিকল্পনা খুব কঠিন একটা ব্যাপার, তবে নিউ মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম বিশেষ করে ইউটিউব নিয়ে তার কিছু পরিকল্পনা আছে। 

"আপাতত আমার গানের চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য আমি নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছি। ইউটিউবকে আমার বেশ একটা নিজের ঘর বলে মনে হয় - মানে আমার ক্রিয়েটিভিটির ঘর। আপাতত আমি আমার ভালোলাগার গানগুলো গেয়ে ইউটিউবে তুলে রাখছি।” 

তিনি বলেন, “আমার কাজে যেন আমার চিহ্ন থাকে তাই এই গানগুলোর মিউজিক এরেঞ্জমেন্টের কাজ আমি নিজেই করছি, চেষ্টা করছি আসলে বলা ভালো। ভবিষ্যতে এই মিউজিক এরঞ্জেমেন্ট আরো অনেক ভালোভাবে শিখবার ইচ্ছা রয়েছে। পরবর্তীতে ইচ্ছা রয়েছে নিজেদের কিছু মৌলিক গানের কাজ করার।” 

“আমি খুব ভাগ্যবান যে আমার চারপাশে কিছু গুণী বন্ধু আছেন যারা ভালো লিখেন - আছেন আমার জীবনসঙ্গী তারেক, যে আমার সমস্ত কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের সম্মিলিত কিছু কাজের ইচ্ছা রয়েছে ভবিষ্যতে।”

এসবিএস বাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিঘাত সুলতানা তিথি বলেন, "বাংলা সংস্কৃতি লালন করে আমরা যারা বেড়ে উঠেছি তারা যেন তা ধারণ করতে পারি, প্রসার করতে পারি। আমরা অনেক সময় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মেতে উঠি যেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে খুব দ্রুত ছড়ায়, অহেতুক মূল্যবান সময় নষ্ট করি। আমি বলবো, ভালো গান শুনুন, ভালো সংস্কৃতির চর্চা করুন এবং ছড়িয়ে দিন।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান থেকে পাশ করা তিথি বর্তমানে কাজ করছেন অপটাস কোম্পানির কাস্টমার রেজুলূশন এক্সপার্ট হিসাবে।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিথির স্বামী তারেক নুরুল হাসান, যিনি নিজেও একজন সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুরাগী। 

আরও পড়ুনঃ 

Share
Published 28 August 2020 2:37pm
Updated 28 August 2020 4:02pm
By Shahan Alam
Presented by Shahan Alam

Share this with family and friends